
।। আরিয়ান খান, কক্সবাজার।।
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলছে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ। এর মধ্যে গত শনিবার রাতে শুরু হওয়া গোলাগুলি চলে রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত। তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ সীমান্তের টেকনাফ এলাকার ঘরবাড়ি। সীমান্তের ওপারে ভারী অস্ত্রের টানা ব্যবহার টেকনাফবাসীর আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। অনেকটাই থমকে গেছে জনজীবন। কাজে যেতে পারছেন না শ্রমজীবীরা। সীমান্তের কাছের লোকজন ঘরের বাইরেও বের হচ্ছেন সাবধানে।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে কয়েক মাস ধরে সংঘর্ষ চলছে আরাকান আর্মির। মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে টেকনাফের হোয়াইক্যং উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা মৌলভিপাড়া, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা ভয়ের মধ্যে আছেন। তারা আরও জানান, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে এ যুদ্ধ চলছে।
উনছিপ্রাং এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সীমান্তের ওপার থেকে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হলেও মনে হচ্ছে এগুলো আমাদের ঘরে পড়ছে।
হ্নীলা মৌলভিপাড়া এলাকার কাশেম আলী বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এতে ভালোভাবে ঘুমাতেও পারছি না।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, টানা দুই সপ্তাহ ধরে সীমান্তের ওপারে ভারী অস্ত্রের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে আমাদের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সীমান্তের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা টহল বাড়িয়েছেন। সীমান্তের একাধিক সূত্র আলোকিত পাহাড়কে জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অনেকে নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে সীমান্তে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি ও কোস্টগার্ড আট দফায় চার শতাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ছিলেন। সবশেষ ৪ মার্চ অনুপ্রবেশের সময় নারী, শিশুসহ ১৪ রোহিঙ্গাকে আটক করে ফেরত পাঠানো হয়।
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।