খাগড়াছড়িতে শিশু সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন বিষয়ক জবাবদিহিতা অধিবেশন অনুষ্ঠিত

।।নিজস্ব প্রতিবেদক।।
খাগড়াছড়িতে সুইডিশ দাতা সংস্থা সিডা’র অর্থায়নে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কারিগরি সহযোগিতায় “শিশু সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন বিষয়ক জবাবদিহিতা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল সাড়ে দশটায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জাবারাং কল্যাণ সমিতি-ওয়াই মুভস প্রকল্পের বাস্তবায়নে পেরাছড়া এনসিটিএফ এ অধিবেশনের আয়োজন করে।

অধিবেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাঈমা ইসলাম।

সভায় জেলা এনসিটিএফ সাধারণ সম্পাদক হৃদয় ত্রিপুরা ও সাংগঠনিক সম্পাদক’র নূর ইসলাত জাহানের যৌথ উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাবারাং কল্যাণ সমিতি’র কর্মসূচি সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। দেশের শিশু ও যুব জনগোষ্ঠীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম করতে ওয়াই মুভস প্রকল্প বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ)দেশের ১৬টি জেলায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র সহযোগিতায় ওয়াই মুভস প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে বলেও তিনি জানান।

পেরাছ[ড়া এনসিটিএফ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহনা ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক রোকেয়া বেগম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা উষানু চৌধুরী, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সুস্মিতা খীসা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান চৌধুরী,  পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা প্রমুখ।

উপস্থিত এনসিটিএফ সদস্যবৃন্দ একে একে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত সমস্যাগুলো প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপস্থাপন করেন। জেলা এনসিটিএফের চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্য মকলতি ত্রিপুরা, পেরাছড়া এনসিটিএফের সাংগঠনিক সম্পাদক জিনেস ত্রিপুরা, পেরাছড়া এনসিটিএফের সদস্য রিমন ত্রিপুরা, রৌদ্র ত্রিপুরা, সোনা মনি ত্রিপুরা, হামবাই ত্রিপুরা, গীতা ত্রিপুরা, বেলিনা ত্রিপুরা প্রমুখ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ উপস্থাপন করেন। এছাড়াও উন্মুক্ত সেশনে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেপোলিয়ন চাকমা।

অধিবেশনে বাল্যবিবাহ, শিশু পার্ক নির্মাণ,  স্কুলে শিক্ষার্থীদের থেকে টমটমে অধিক ভাড়া, চেঙ্গী নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ, স্কুল স্কুলবাস ব্যবস্থা করা, সরকারি স্কুল ও এমপিওভুক্ত স্কুলে শিক্ষক সংকটসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তুলে ধরেন এনসিটিএফ সদস্যবৃন্দ। এসময় সমস্যাগুলো সমাধান করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউএনও হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত আবেদনপত্র তুলে দেন এনসিটিএফ’র জেলা প্রতিনিধি ও পেরাছড়া এনসিটিএফ’র সদস্যরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাঈমা ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে যে পাবলিক টয়লেটের সমস্যা রয়েছে, সেটাকে ইউপি চেয়ারম্যানকে মনিটরিং ও তদারকি করার নির্দেশ দেন। স্কুল পরিবহণের বিষয়ে তিনি উধ্বর্তন পর্যায়ে আলোচনা করার কথা জানান। তবে পার্বত্য জেলা পরিষদ চাইলে ব্যবস্থা করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ইউএনও। চেঙ্গী নদীর উপর ব্রীজের বিষয় এটি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। একটি বড় প্রকল্প নির্মাণ করতে একটু সময় লাগবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে। শিশু পার্কের বিষয়ে পরিমাণমতো খাস জায়গা পেলে শিশু পার্ক অচিরেই নির্মাণ করার আশ্বাস দেন ইউএনও। এদিকে স্কুল শিক্ষার্থীদের থেকে টমটমে অধিক ভাড়া আদায় বিষয়ে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়। মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমাদের প্রত্যেকের যার যার অবস্থান থেকে সজাগ থেকে সক্রিয় হতে হবে। শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে গত জেলা প্রশাসনের আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী মহোদয় প্রস্তাব করেছিলেন, তিন পার্বত্য জেলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার ব্যাপারে উত্থাপন করেছেন, আশা করি, প্রতিমন্ত্রী মহোদয় যেহেতু তিনিই নিজেই উত্থাপন করেছেন সেটা তিনি অচিরেই বাস্তবায়ন করবে। সরকারি স্কুলে বা এমপিওভুক্ত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে আমাদের এখতিয়ার নেই উল্লেখ করে বলেন, এটি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কথা বলতে হবে। ইউএনও আরো বলেন, অপরকে ভালো হওয়ার জন্য বললাম, নিজে বাহিরে এসে খারাপ হবে, সেটা কিন্তু হবে না। অপরজনকে বলার আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে, নিজেদের ভালো হতে হবে। শিশু-কিশোর বয়সে অনেকে সঙ্গদোষেও খারাপ হতে পারে। সেজন্য নিজেকে সচেতন হতে হবে। ভালো করে পড়ালেখা করতে হবে।

পরে অন্যান্য অতিথিরা উত্থাপিত সমস্যা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় বা সমাধান করা যায় তা নিয়ে নিজেদের দাপ্তরিক দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে পালন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।