

মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি:
দেশ এখন পুরোদস্তুর শরৎকাল হলেও পরীক্ষামূলকভাবে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে চমক দেখিয়েছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলার চড়পাড়ার কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক। সাধারণত শীতকালীন ফসল হিসেবে পরিচিত টমেটো এবার তিনি গ্রীষ্মকালেও চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন।
সাধারণত টানা বৃষ্টি, তীব্র দাবদাহ আর জলাবদ্ধতার দরুন অধিকাংশ এলাকার কৃষকরা এ সময়ের টমেটো চাষে লোকসানের মুখে পড়েন। সেই দিকটি মাথায় রেখে কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক গ্রীষ্মকালেও টমেটোর চাষ করেন।
মাটিরাঙ্গার আইডিএফ এর কৃষি ইউনিটের আওতায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এবং ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) কৃষি উন্নয়ন বিভাগ এটি বাস্তবায়ন করেন।
প্রতিকূল আবহাওয়া এবং রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, সঠিক পরিচর্যা এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন। ফলস্বরূপ, তার জমিতে এখন লাল টমেটোতে ভরে আছে, যা দেখতে অনেকটা শীতকালের টমেটোর মতোই।
আবু বক্কর সিদ্দিক মাটিরাঙ্গায় প্রথমবারের মতো মাত্র ১০ শতক জমিতে বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ জাতের ৫০০ গ্রাফটিং চারা রোপণ করেন। প্রতিটি চারা যশোর থেকে আনা হয় ১৬ টাকা দরে। জমিতে মালচিং পেপার ব্যবহারসহ সার, কীটনাশক, হলুদ ফাঁদ, ফোরেমন ফাঁদসহ, এসব খরচ আইডিএফ বহন করে। মূলত পাহাড়ে কৃষি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন এবং কৃষিতে বিল্পব ঘটাতে আইডিএফ এসব উদ্যেগ গ্রহণ করে।
কৃষক আবু বক্কর জানান, ইতোমধ্যে প্রতি কেজি টমেটো ১১০ টাকা দরে প্রায় ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে তিনি যথেষ্ট মুনাফা পেয়েছেন। মৌসুম শেষে লক্ষধিক হাজার টাকার টমেটো বিক্রির আশা করছেন তিনি।
আবু বক্কর জানান, গ্রীষ্মকালে টমেটোর চাহিদা অনেক বেশি থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। শীতকালের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি হলেও, বাজার মূল্য বেশি থাকায় লাভও বেশি হয়। তাছাড়া গ্রাফটিং চারাগুলো সাধারণ বা বিচি বেগুন গাছে কলম করা হয়, যা গ্রীষ্মকালীন মৌসুমেও গাছ টিকে থাকতে সাহায্য করে এবং ভালো ফলন দেয়।
আইডিএফ’র সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিথুন দাশ বলেন, “২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমরা চড়পাড়ায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেছি। অল্প জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেই কৃষক আবু বক্কর সাফল্য পেয়েছেন। এ সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যান্য কৃষকরাও গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি।”
স্থানীয় কৃষকরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে তাঁদের মতে, সারা বছর টমেটো পাওয়া গেলে একদিকে কৃষকের আয় বাড়বে, অন্যদিকে বাজারে টমেটোর চাহিদাও পূরণ হবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, আবু বক্করের এই সাফল্য আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা নানাভাবে সহযোগিতা করছি। বিশেষ করে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সহনশীল জাতের বীজ সরবরাহ এবং সঠিক পরিচর্যার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।”
আবু বক্করের এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি মাটিরাঙ্গার কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত। তার পথ অনুসরণ করে এখন অনেক কৃষক সারা বছর টমেটো চাষের স্বপ্ন দেখছেন, যা খাদ্য উৎপাদন ও কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।