দূষণ ও সংকটে বিলুপ্তির পথে দীঘিনালার মাইনী নদীর মাছ

।। সোহানুর রহমান, দীঘিনালা।।
স্থানীয় মৎস্য অফিস ও নদীর ওপর নির্ভরশীলদের তথ্য বলছে, কয়েক দশক আগেও খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মাইনী নদীতে ১ শ এর বেশী দেশীয় প্রজাতির মাছের দেখা মিলত। সময়ের পরিক্রমায় এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে নদীর নাব্যতা হ্রাস, মাইনী ভ্যালীতে তামাকের আগ্রাসন, নদী তীরবর্তী কৃষি কাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, বালু উত্তোলনে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার ও পানিতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারকে দুষছেন অনেকে।

মাইনী নদী উৎপন্নের পর থেকে এখন পর্যন্ত খনন কাজ না হওয়ায় পাহাড়ী ঢলে পাড় ভাঙ্গা, পলি জমাসহ নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়ে পানির স্তর কমেছে অনেকাংশ। নদীতে মাছের বংশ বিস্তার ও টিকে থাকার মতো পানির স্তর ও গুণাগুণ না থাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। যাকে অশনি হিসেবে দেখছেন নদীর অংশীজনরা।

মাইনী নদীর দুই ধারে তামাক আগ্রাসন বেড়েছে গত দুই দশকে। এর সাথে আছে ধান, শাক সবজি চাষসহ নিয়মিত-অনিয়মিত কৃষির চাষাবাদ। সবমিলিয়ে মানবসৃষ্ট দুর্যোগে বিপন্নের পথে দেশীয় প্রজাতির মাছের ভান্ডার এ নদী।

দীঘিনালার হাচিনসনপুর গ্রামের সোহেল রানা জানান, বিগত কয়েক বর্ষা মৌসুমে নদীতে মাছের দেখা মিলছে না। নদীতে পানি না থাকায় জাল ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। আগে মাইনী নদীর মাছ ধরে তা দিয়ে সংসার চালানো যেত। এখন আর সে দিন নাই।

মেরুং ইউনিয়নের সোবাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান কাজী (৭০) জানান, মাইনী নদীতে মাছ ধরে বিকেলে হাটে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। গত কয়েক দশক ধরে নদীতে গিয়ে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এক সময় বোয়াল, কাতল, রুই, পাবদা, শিং, মাগুর সহ নানান প্রজাতির দেশীয় বড় মাছ পাওয়া যেত এখন এ ধরনের মাছ আর নেই।

মাইনী নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলে জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এক সময় দিনে যেখানে ২০-২৫ কেজি মাছ পেতাম সেখানে এখন কেজি পাওয়ায় ভাগ্যের বিষয়। নদী মরা যাওয়ায় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।

এ দিকে দীঘিনালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অবর্ণা চাকমা নদীতে মাছ কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মানবসৃষ্ট সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীতে কাঙ্ক্ষিত পানি নেই। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে মাইনী ভ্যালিতে তামাকের যে আগ্রাসন তাতে নদী অস্তিত্ব সংকটে । পাশাপাশি খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট ও পাহাড়ি ঝিরি বিনষ্ট হওয়ায় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হারিয়ে যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে বিষপ্রয়োগ ও নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে অবাধে মাছ শিকার করা হয় কোন কোন এলাকায়। এতে মাছের সাথে জলজ প্রাণীও বিলুপ্ত হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের তথ্য বলছে, দীঘিনালা–লংগদু ও দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কে মেরুং ও জামতলী শুল্ক আদায় কেন্দ্র ও চেকপোষ্ট থেকে গত ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত জেলেদের মাধ্যমে মাছ আহরণ হয়েছে ৫০৪ টন। এতে সরকারের শুল্ক আদায় হয়েছে ৯২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪৪ টাকা। এসকল তথ্য নিশ্চিত করেন রাঙামাটি মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো: আশরাফুল আলম ভূঁইয়া।