পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সকলকে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি।
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের ২৯৮নং খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপিকে পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান, মং সার্কেলের চীফ সাচিংপ্রু চৌধুরী, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার), খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (অবঃ) প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা, সিনিয়র সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিবিৎসু ত্রিপুরা সুকান্ত, বাংলাদেশ মারমা উন্নয়ন সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ম্রাগ্য মারমা বক্তব্য রাখেন ।

এসময় অনুষ্ঠানে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মিণী মল্লিকা ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সুপ্রদীপ চাকমা, খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, জেলার সকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ সহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা বলেন, যিনি একসময় আমার কলেজের শিক্ষার্থী, তিনি এখন আমাদের অভিভাবক। সমাজ ও জাতির উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সেজন্য তিনি জেলার শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করতে অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য চাকুরির ক্ষেত্রে যে ৫% কোটা পুনরায় চালু করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সু দৃষ্টি কামনা করতে পার্বত্য মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরী বলেন, বিগত সময়ে নিয়োগকৃত প্রাথমিক শিক্ষকরা এখনও বেতন ভাতা পায়নি। তা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন তিনি। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে টেকসই সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে যে পাড়া কেন্দ্র রয়েছে, সেই পাড়াকেন্দ্রের শিক্ষকরা কযেক মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছে না। এগুলোকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। এসময় কৃষি ক্ষেত্রে জেলায় ব্যাপক সম্ভাবনা উল্লেখ করে তিনি খাগড়াছড়িতে ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের দাবি করেন।

মং সার্কেল চীফ সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেন, পরিশ্রমের কারণে তিনি উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। বার বার টানা তিন বার এমপি হওয়া কিন্তু সহজ নয়। তার মেধা ও পরিশ্রমের কারণে তা সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নের মূল স্রোতধারা অব্যাহত রাখতে তিনি সংবর্ধিত অতিথির প্রতি অনুরোধ জানান।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান বলেন, তার (পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী) নেতৃত্বে গতবারে খাগড়াছড়ি জেলায় যে উন্নয়ন, আগামীতে আরো ব্যাপক উন্নয়ন হবে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা দেশের একটি উন্নয়নের রোড মডেল জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের অবহেলিত মানুষকে এগিয়ে নিতে পার্বত্য চুক্তি করেছেন। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিচ্ছেন। চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও জননেত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অনন্য জায়গায় পৌঁছাতে হবে। এজন্য নতুন প্রজন্মকে দক্ষ করে তুলতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে কখনো স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামকে পিছনে রেখে কখনো স্মার্ট বাংলাদেশের চিন্তা করি না। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সকলকে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। সকলকে উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটতে হবে। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। মন্ত্রী আমি নই, প্রতিমন্ত্রী আমার পার্বত্যবাসী। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্প্রদায়ের শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়াও অন্যান্য বিশেষ অতিথিরা দীর্ঘ দুই যুগ পর খাগড়াছড়ি আসন থেকে টানা তিন বারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে।

পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংলামং চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী। শ্রদ্ধাভিনন্দন মানপত্র পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক ও আবৃত্তি শিল্পী প্রতিভা ত্রিপুরা।