

সোহানুর রহমান, দীঘিনালা প্রতিনিধি।।
বাণিজ্যিকভাবে খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় গড়ে উঠেছে উচ্চ ফলনশীল জাতের কুল বাগান। কুল বাগানগুলো থোকায় থোকায় ভরে গেছে। বাজারে বলসুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারতসুন্দরী ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ছোট- বড় বাগানও গড়ে উঠেছে।
অল্প সময়ে কুল চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় কৃষক ও শিক্ষিত বেকার যুবকরা বাগান গড়ে তুলছেন। জেলায় ০৬ বছর আগে বিদেশী জাতের কুল চাষ শুরু হলে পাহাড়ি জমিতে গড়ে উঠে কুলের বাগান। অনাবাদি জমিতে কুল চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন শিক্ষক দম্পতি জেসমিন চাকমা ও মুন্না চাকমা।
খাগড়াছড়ির জেলার পাহাড়ি জনপদ দীঘিনালার দক্ষিণ হাচিনসনপুর— তারাবুনিয়ায় কুল চাষ করেছেন শিক্ষক এ দম্পত্তি। পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেসমিন ও মুন্না কর্মজীবনের অবসরে এ বাগানটি গড়ে তুলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানের গাছ গুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছে কুল। কাশমীরি বল সুন্দরী, আপেল কুল, নারকেলী, আগাম দেশী সহ কয়েক জাতের কুল রয়েছে বাগানটিতে।কয়েকজন পরিপক্ক কুল হারভেস্ট করছেন কয়েকজন শ্রমিক। এতে সাথে হাত লাগিয়েছেন জেসমিন— মুন্না দম্পত্তি। এ ছাড়া পেয়ারা, লেবু পেঁপেসহ অন্য ফসল চাষ করছে এ শিক্ষক দম্পতি।
কুল বাগানের মালিক জেসমিন চাকমা বলেন, ‘গত ০২ বছর আগে বাগানটি নিজ হাতে সাজিয়েছেন। ৫০০ টি কুলের চারা লাগিয়েছিলেন তিনি। গত বছরে ৫লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। এবছর এর একটু বেশি বিক্রি হবে আশা করছি।’
এসময় তিনি সরকারী সহযোগীতার পাশাপাশি শহর মুখী বিপনন ব্যবস্থাকে আরো সচল করার দাবী জানান।

শখ থেকেই প্রথমে বাগান করার পরিকল্পনা। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে এখন বাজারে কুল বিক্রি করে ভালো লাগছে। নিজ হাতে বাগান থেকে বরই ছিড়তে খুব আনন্দ লাগে বলে জানান মুন্না চাকমা।
বাগানের কেয়ারটেকার ত্রিলক চাকমা বলেন, ‘সারা বছর গাছেগুলোকে সন্তানের মতো দেখা শোনা করি। বছর শেষে যখন গাছগুলোতে বরই আসে তখন সকল পরিশ্রম সার্থক হয়ে যায়।’
স্থানীয় সাংবাদিক সোহেল রানা বলেন, ‘বাগানটি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। কুলগুলো খুব রসালো ও মিষ্ঠি। শিক্ষাগতার পাশাপাশি অবসরে এতো সুন্দর একটি বাগান সাজিয়ে চমক লাগিয়েছেন এ দম্পত্তি।’
কুল খেতে সুস্বাদু, মিষ্টি, রসাল ও সাইজে অন্য কুলের চেয়ে বড়। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফল হওয়ায় শীতকালে বাজারে চাহিদা থাকে ব্যাপক। স্থানীয় বাজারে কুলের চাহিদা মিটিয়ে বিভাগীয় শহর সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাহাড়ি কুলের চাহিদা তৈরি হয়েছে।
কুলগাছ লাগানোর ৭ মাস পর থেকে গাছে ফুল আসতে শুরু হয়। কুলের কাঁচা- পাকায় গায়ের রং সবুজ, হলদে, গাড় খয়েরি ও ভেতরের রং সাদা। প্রতি বিঘায় কুলবাগানে বছরে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
খরচ বাদে বিঘায় প্রায় এক লাখ টাকা লাভ হয়। শিক্ষিত বেকার যুবকরা কুলবাগান দেখে চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা দরে।
দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন জানান, ‘পাহাড়ের কুল স্থানীয় বাজার সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর চাহিদা রয়েছে। পাহাড়ের মাটি উর্ব্বর হওয়ায় কুলের রং, রসালো ও মিষ্ঠি হয়ে থাকে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের ফলজ বাগান করার পরামর্শ দিচ্ছি।’