মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে যারা

নিউজ ডেস্ক।।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) শপথের সময় নির্ধারণের পর সেই আলোচনার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। আগের মন্ত্রিসভাগুলো থেকে এবারে কিছুটা ভিন্নতা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ‘পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব’ ও অভিজ্ঞ এমন নেতারাই মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। যুক্ত হতে পারেন দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও ত্যাগী নেতারাও। নতুনরা যেমন যোগ হবেন, তেমনই পুরানোদের অনেকে থাকছেন না বলেও আভাস পাওয়া গেছে।

সূত্র বলছে, এবারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।

তরুণদের মধ্যে যোগ হতে পারেন ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।

অন্যদিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম নতুন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হতে পারেন।

টেকনোক্র্যাট কোটায় আবারও মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। জামালপুর-৫ (সদর) আসনের এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং নড়াইল-২ আসনের এমপি ও ক্রিকেট তারকা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকেও মন্ত্রী বানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদও মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় আছেন।

কোথায় কাকে নিয়োগ দেয়া দরকার তা প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ‘এবারের মন্ত্রিসভা কেমন হতে পারে’ এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক জ্ঞানী মানুষ। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ওনার ঠিক করা আছে। এটা তিনি জানেন, কোথায় কাকে কখন নেয়া দরকার। এটা প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঠিক করেন। সারা পৃথিবীতেও এটিই নিয়ম।

তবে মন্ত্রিসভায় কাকে নেয়া হবে কিংবা হবে না; সেই সিদ্ধান্ত একান্তই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

এরআগে মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ১১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেলে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ঐতিহ্যগতভাবেই শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়ে থাকে। আমরা সন্ধ্যা ৭টায় শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

যারা মন্ত্রী হবেন, তাদের বায়োডাটা হাতে এসেছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদের সচিব বলেন, ‘প্রস্তুতির ওই অংশে আমরা এখনও যাইনি।’ মন্ত্রীদের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই কাজটিও এখনও করা হয়নি। খসড়াও আসেনি।

সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা পাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সে অনুযায়ী নতুন মন্ত্রীদের শপথের জন্য আলাদা আলাদা ফোল্ডার প্রস্তুত করতে হবে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের চালকসহ সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা দেয়ার দায়িত্ব সরকারি যানবাহন অধিদফতরের।

একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর, এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। সেদিনই রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। ৭ জানুয়ারি বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীকে শপথ পড়ান তখনকার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

তার আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়া হয় মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, কাকে কোন দফতরের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। শপথের আগে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা সেবারই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী গত পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট দুই মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করেন।

মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে সংবিধান কী বলছে?
সংবিধানের ৫৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে।’

আর একই অনুচ্ছেদের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকিবেন।’ আর সংবিধানের ৫৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকিবেন।’

ধারা দুইয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করিবেন।’

এক্ষেত্রে শর্তও দেয়া হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, ‘তাহাদের সংখ্যার অন্যূন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে মনোনীত হইতে পারিবেন।’

আর ধারা তিনে বলা হয়েছে, ‘যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।’

সুত্র: সময় টিভি