সংরক্ষিত নারী আসন: হলফনামা প্রকাশে এবারও গড়িমসি

।। আলোকিত পাহাড় ডেস্ক।।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০ জন একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার (যুগ্ম সচিব) মুনিরুজ্জামান তালুকদার গতকাল সোমবার জানান, রবিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় সব নারী প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পার হওয়ার পরবর্তী কার্যদিবসে একক প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। সে হিসেবে সোমবার ছুটি থাকায় মঙ্গলবার (আজ) ওই ৫০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল বা জোটগুলোর পাওয়া আসনের বিপরীতে সংখ্যানুপাতে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ২২৪ আসনে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ আসনে। তারা সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দুটি দল দুটি আসন পেয়েছে। তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেছে। ফলে আওয়ামী লীগ ৪৮ সংরক্ষিত নারী আসন পেয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ১১ আসনে জয় পেয়েছে। তারা দুটি সংরক্ষিত নারী আসন পেয়েছে। এ নির্বাচনের ভোটার সাধারণ আসনের সংসদ সদস্যরা। কিন্তু এ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেনি।

হলফনামা প্রকাশে এবারও গড়িমসি
এদিকে এবারও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যের হলফনামা প্রকাশে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গড়িমসির ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পরও কমিশনের ওয়েবসাইটে তাদের হলফনামা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে নির্বাচিতদের ব্যক্তিগত তথ্য এখনও অনেকের অজানা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করা হয়েছিল নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ নিয়ে ইসির ওয়েবসাইটে ‘ভুতুড়ে আচরণ’ (তথ্য দিয়েও সরিয়ে ফেলা) ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।

নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালে বলা আছে, প্রার্থীদের কাছ থেকে হলফনামার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাদি ভোটারদের মধ্যে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে ভোটাররা এসব তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। নির্ধারিত হলফনামার মাধ্যমে দাখিলকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিভিন্ন তথ্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এক্ষেত্রে ইসি নিজেদের বিধিবিধান নিজেরাই লঙ্ঘন করছে। আগের ইসিও প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য প্রকাশে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংবলিত হলফনামা দাখিলের বিধান হয়েছে জনগণ বা ভোটারদের প্রয়োজনে। ভোটাররা যেন প্রার্থী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে-বুঝে ভোট দিতে পারেন, সে জন্যই এই বিধান করা হয়। কিন্তু সংরক্ষিত নারী আসনে যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে তাতে এসব হলফনামার প্রয়োজন আছে বলেও মনে হয় না।

প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ইসি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রার্থীর হলফনামার তথ্য প্রকাশ করে আসছে। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনের জন্যও একই বিধান রয়েছে। কিন্তু এ বিধান যথাযথ প্রতিপালন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর উচ্চ আদালত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও প্রার্থীদের সাতটি তথ্য সংবলিত হলফনামা দাখিল করতে হবে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন আদালত। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধতা ঘোষণার রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন পর্যবেক্ষণ দেন।
সূত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ