নেই ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক, বিদ্যালয় ছাড়ছে অনেক শিক্ষার্থীরা

মো. ইসমাইলুল করিম, প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মুসলিম অধ্যুষিত তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নেই। তাই হচ্ছে না ইসলাম ধর্ম পাঠদান। এতে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ফলে বাধ্য হয়ে গত দু-বছরে ২০০ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছাড়েছেন বলে জানান অভিভাবক ও স্থানীয়া।

অভিভাবকরা বলছেন, এসব বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন মুসলিম শিক্ষক না থাকলেও ইসলাম ধর্ম শিক্ষা ক্লাসের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা জীবনের শুরুতেই মুসলিম কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা জ্ঞানে চরম বিপর্যয় ঘটছে ঐ বিদ্যালয়গুলোতে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, লামা উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ফাইতং ইউনিয়নে হেডম্যান পাড়া, গজালিয়া হেডম্যান পাড়া ও রাজবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নেই। বিদ্যালয়গুলো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থিত। এসব বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৫২৩ জন।

অভিযোগ উঠেছে, গজালিয়া হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ বছর ধরে কোন মুসলিম শিক্ষক নেই। এছাড়া রাজবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষক নেই দুই বছর ধরে ও ফাইতং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই এক বছর ধরে।

এ বিষয়ে অভিভাবকদের দাবীর প্রেক্ষিতে গত দুই মাস আগে এসব বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষক সংযুক্তির জন্য বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি প্রেরণ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে ফাইতং ইউনিয়ন হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এ বিদ্যালয়ে ২৭৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪৫জন মুসলিম শিক্ষার্থী রযেছে।কর্মরত রয়েছেন ০৬ শিক্ষক। কিন্তু সব শিক্ষকই বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি মার্মা সম্প্রদায়ের। তাই ইসলাম ধর্ম বিষয়ে পাঠদান হয়না। মাঝে মধ্যে নিরুপায় হয়ে এসব শিক্ষকরা ইসলাম শিক্ষা পাঠদান করালেও যা শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন আরবি ও সূরা-আয়াতের ব্যাখ্যা উপজাতি শিক্ষকের পক্ষে পড়ানো সম্ভব হয়না। ফলে এ পর্যন্ত এ বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়ে পাশের নূরানী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। অপরদিকে গজালিয়া হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ১৬৬জন শিক্ষার্থীী। এর মধ্যে ১১৩জনেই মুসলিম শিক্ষার্থী। এখানেও কর্মরত সব শিক্ষকই বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। তাই এ বিদ্যালয়েও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে ক্লাস হয়না। রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮৩জন, মুসলিম শিক্ষার্থী ৩৩জন। এখানেও কোন মুসলিম শিক্ষক নেই। তাই ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থী আনোয়ার, রাফি ও মুনায়েম,তসলিমা, মারুফা বলেন, আমাদের স্কুলে ইসলাম ধর্ম ক্লাস হয়না। তবে পরীক্ষা কাছে আসলে মাঝে মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী শিক্ষকরা ইসলাম ধর্ম ক্লাস নেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থী অভিভাবক মনজুর আলম, ফরিদ ও ইফতেখাইরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কোনো মুসলমান শিক্ষকের পদায়ন না থাকার কারণে এসব স্কুলে ইসলাম শিক্ষা ক্লাস নেয়া হয় না। ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা না পেলে শিক্ষার্থীরা বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তায় অতিদ্রুত এসব অন্তত একজন করে হলেও মুসলিম শিক্ষক দেয়া জরুরী।

তবে গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংক্যনু মার্মা বলেন, আমরা একাধিকবার শিক্ষা অফিসে মুসলিম শিক্ষকের জন্য জানিয়েছি। কিন্তু আজও মুসলিম শিক্ষক দেওয়া হয়নি।ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক না থাকায় ফাইতং হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২-৩ বছরে ২০০ এর মত শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়েছে। আরও কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে যেতে চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুইচিং মার্মা।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষক নেই, সেসব বিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষক সংযুক্তির জন্য গত দুই মাস আগে জেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব বিদ্যালয়ে একজন করে হলেও মুসলিম শিক্ষক সংযুক্তি করবে কর্তৃপক্ষ।

তবে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিণয় চাকমা বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষক নেই, সেসব বিদ্যালয়ে একজন করে হলেও মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষকের জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে চিঠি দেয়ার পশাপাশি আমি সরাসরি জেলা পরিষদ নির্বাহীর সাথে কথা বলেছি। কিন্তু বদলী প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় আপাতত ওইসব বিদ্যালয় গুলোতে মুসলিম শিক্ষক সংযুক্তি করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।