রাতের আধারে সন্ত্রাসী কায়দায় চারশত সুপারী গাছ উচ্ছেদ, আতঙ্কে এলাকাবাসী

আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি
কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তর থোয়াইংগাকাটা মৌলভীর ঘোনা এলাকায় রাতের আধারে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে চারশত সুপারী গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাগানের চারপাশে নির্মিত ঘেরা বেড়া ভেঙে ফেলা, লুটপাট ও ভাঙচুরসহ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার (২০ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে। আক্রান্ত বাগানটি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এবং দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগদখলীয় শায়েক শাইখ আল্লামা হারুন আজিজির মালিকানাধীন জমিতে গড়ে তোলা হয়।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সামশুল আলম, রমজান আলম ও মো. সরেয়ায়ারসহ অনেকে জানান— রাত ১০টার দিকে আচমকা তিন রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এরপর ১০-১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল বাগানে প্রবেশ করে লাগানো সুপারী গাছের চারাগুলো একে একে উপড়ে ফেলে। ঘেরা বেড়া ভেঙে দেয় এবং ভাঙচুর চালায়।

তারা বলেন— “আমরা বাধা দিতে চেষ্টা করলেও আমাদের উপরও হামলা করা হয়। প্রাণভয়ে আমরা সেদিন প্রতিরোধ করতে পারিনি। এর আগেও একইভাবে এই বাগানে আম গাছের চারা উপড়ে ফেলা হয়েছিল।”

শায়েক হারুন আজিজির ভাই হাফেজ আজিজুল অভিযোগ করে বলেন— “আমার বড় ভাই ভাড়াটে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এর আগেও একইভাবে আমাদের বাগানের গাছ কেটে দিয়েছে।”

অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী বাগান মালিক শায়েক শাইখ আল্লামা হারুন আজিজি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন— “আমার পৈত্রিক জমিতে বহু কষ্টে এবং শখ করে আমি সুপারী ও আমগাছের চারা লাগিয়েছিলাম। কিন্তু রাতের আধারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার বড় ভাই পুরো বাগানের গাছ উপড়ে ফেলে দিয়েছে। বেড়া ভেঙে দিয়েছে, গাছগাছালি তছনছ করেছে। এতে আমার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। গাছের প্রতি তার এ কেমন বিদ্বেষ তা বুঝতে পারছি না।”

অভিযুক্ত বড় ভাই মাহমুদুল হাসান মুঠোফোনে জানান- “আমি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। স্থানীয় কিছু লোকজন এ ঘটনায় জড়িত। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে।”

ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, দিনে-দুপুরে আইনের শাসন থাকলেও রাতে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে যেভাবে গাছ কেটে ফেলে, তা এক ভয়াবহ নজির। তারা আরও বলেন, এ ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে
ভুক্তভোগী জমির মালিক শায়েক হারুন আজিজি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, “এ ঘটনার ন্যায় বিচার না হলে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম আরও বাড়বে। আমি আইনের আশ্রয় নিচ্ছি এবং প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি— দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।”

ঘটনার পর থেকে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন— প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও ভাঙচুরের মতো ভয়াবহ ঘটনায় প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?