বিলাইছড়িতে বিদ্যুৎ চলে গেলে চলে যায় নেটওয়ার্ক, দুর্ভোগে গ্রাহক, প্রয়োজন প্রশাসনে সুদৃষ্টি

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি প্রতিনিধি-
বিদ্যুৎ চলে গেলে চলে যায় টেলিটক সহ অন্যান্য নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সেবায় চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলার জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। অনেকে বলছেন, দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এইসব সমস্যা হচ্ছে । দিনের পর দিন,মাসের পর মাস নেটওয়ার্ক সমস্যা হওয়ায় অফিসে কথা বলেও হচ্ছে না কোন সুরাহা। ফলে কোম্পানিগুলোরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে ব্যাংক লেনদেন সহ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক কাজ কর্মে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অনেকে বলছেন সমাধানে প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন হবে। আবার অনেকে বলছেন,Wi-Fi, চালু হবার পর থেকে টেলিটক, রবি ও এয়ারটেল নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে চলে যায় রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক নেটওয়ার্ক। চলতে চলতে হঠাৎ নেটওয়ার্কের ঝামেলায় পড়তে হয় উপজেলাবাসীর। খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে অনেক সুযোগ-সুবিধা হাতছাড়া হয়ে যায় প্রায়শই। বর্তমান সময়ে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সংযোগ। মোবাইল ফোনের গুরুত্ব নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ জরুরী মূহুর্তে কাউকে ফোন করলে থাকছেনা নেটওয়ার্ক। পাহাড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় নেটওয়ার্ক ধীর গতি। তবুও মানুষ কষ্ট হলেও মানিয়ে নিয়েছে। নেটওয়ার্ক সমস্যার ফলে ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ লেনদেনেও। ফলে নিত্যদিনের সমস্যা সাথে আরেকটি যুক্ত হয়েছে সেটি হচ্ছে নেটওয়ার্ক। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে পর্যটকদের সঙ্গে ফোন ও অনলাইনে বুকিং ও হোটেলে ঠিকমতো খাবারের ওর্ডার নেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ভ্রমণে নৌপথে বোটমালিকদের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বোট মালিক সমিতি।

মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ,রকেট ও নগদের পার্বত্য অঞ্চলে রবি, এয়ারটেল সিম শতকরা ৯০ জন মানুষ ব্যবহার করে। তবে নেটওয়ার্ক নিরবিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লেনদেন ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মানুষের জমিতে কাজ করতে হবে। এতে বিকাশের এজেন্ট হান্নান জানান, রবি,টেলিটক,এয়ারটেল নেটওয়ার্ক যখন থাকেনা তখন ওয়াই-ফাই দিয়ে লেনদেন করি। নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং এ ও লেনদেন ব্যাহত হচ্ছে।

এই বিষয়ে বিলাইছড়িতে টেলিটক অফিসে দায়িত্বে থাকা রিয়াদ জানান,কারেন্ট চলে গেলে সাথে সাথে নেটওয়ার্কও চলে যায়, একচেঞ্চ হয়ে যায়। পানির টাঙ্গিতে তৈল ধাললে তৈল বের হয়ে যায়। চার্জ নেওয়া সময়ও পাচ্ছে না। এটা অফিসে জানানো হয়েছে। ব্যাটারীও নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া যে ব্যাটারীগুলো পাঠানোর কথা বিলাইছড়িতে পাঠিয়েছে জুরাছড়িতে। যদি পুনরায় বিলাইছড়িতে পাঠানো হয় এবং তা লাগালেও হালকা বেকাব দিবে যা ৩০ মিনিটে মতো। এখানে বিদ্যুৎতের সমস্যা বেশি। তাছাড়া আমি নিয়মিত স্টাফ না মাত্র ১৫০০ টাকা বেতনে অনিয়মিত রয়েছি।কারেন্ট চলে গেলে বাসা থেকে আসতে সময় লাগে। এবং লাইন লাগাটে বা জেনারেটর চালু করতে একটু দেরি হয়। তাছাড়া জেনারেটরও সহজে স্টার্ট হয় না। একইভাবে জেলায় দায়িত্বে থাকা শামসুর সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি, জানিয়েছি আশা করি খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।

একইভাবে রবি ও এয়ারটেল অফিসে দায়িত্বে থাকা মো. ইব্রাহীমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বেতন না পাওয়ার কারণে গত ২১ তারিখে দায়িত্ব ছেড়েছি। তাছাড়া যদি নেটওয়ার্ক না থাকে বিভিন্ন জনে মূহুর্তে মূহুর্তে ফোন করে যা খুবই বিরক্তিকর। এখন দেখাশুনার দায়িত্বে কেউই নেই, স্টেশনেও কেউ নেই। স্টেশন পুরো খালি। তিনি আরও জানান, কারেন্ট চলে গেলে, বজ্রপাতে ব্রেকার পড়ে গেলে, ঠিক করা থেকে লাইন পল করলে, জেনারেটর সমস্যা হলে নেটওয়ার্ক সম্পুর্ন বন্ধ থাকে। এগুলো লগে লগে ঠিক করতে হয়। এটা এখন জেলা অফিস জানে। এবিষয়ে জেলা ইঞ্জিনিয়ার মো.আলমগীরের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি দায়িত্বে থাকা অনুপম এর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।কথা মতে অনুপম এর সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন না। যার সেল নাম্বার -০১৬১০০০৪৪৫৫।

বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাফর আহাম্মদ জানান,সঠিকভাবে তদারকি না থাকার কারণে এই অবস্থা। এখানে তাদের সুনির্দিষ্ট কর্মচারী বা জনবল না থাকায় তত্বাবধান দায়িত্বে কেউ নেই। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে হাজার হাজার মানুষ। জেলায় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যাতে ঠিকমত দায়িত্ব পালন করে। প্রয়োজনে দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষে ও প্রশাসনের সুদৃষ্টির কামনা করছি।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান জানান, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া সাথে সাথে নেটওয়ার্কও চলে যায়। বেশ কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা। যার ফলে চরম অসুবিধা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে কার্যক্রম পরিচালনা করতে। বিরক্তিবোধ করছে স্থানীয়রা। ইউনিয়ন পরিষদে এসে তাদের ঘন্টা পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে। যা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামগ্রিক স্বার্থে এবং দ্রুত সমাধান করতে রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।