অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে কিনা কীভাবে বুঝবেন? করণীয় কী?

আলোকিত অনলাইন ডেস্ক।।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে কিনা বুঝতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে অ্যাপেন্ডিক্স কী? অ্যাপেন্ডিক্স হল আমাদের  পেটের ডানদিকে বৃহদান্তের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছোট একটি অঙ্গ।

অ্যাপেন্ডিক্সের নি:সরণ যে ছিদ্র দিয়ে খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে, কোনো কারণে এটি বন্ধ হয়ে অ্যাপেন্ডিক্স সংক্রমিত হতে পারে। তখন সেই অবস্থাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলে।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে শুরুতে পেট ব্যথা হয়। প্রথমে এই ব্যথা কমতে পারে, তবে কিছুক্ষণ পর আবার দেখা দিতে পারে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ব্যথা তলপেটের ডানদিকে গিয়ে স্থির হয়, যেখানে সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্স অবস্থিত থাকে। এ সময় তীব্র ব্যথা দেখা দেয়। যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে চাপ দিলে অথবা কাশি দিলে কিংবা হাঁটাচলা করলে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা প্রদান না করলে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া পুরা পেটে ছড়িয়ে পড়ে যেতে পারে।

লক্ষণ

১. পেট ব্যথা করা। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হন।

২. প্রথমে নাভির চারপাশে ব্যথা অনুভব হয়, পরবর্তীতে তা ডানদিকে চলে যায়।

৩. ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।

৪. পাশাপাশি জ্বরও আসতে পারে।

৫. আবার পেট ফুলে যেতে পারে।

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

৭. খাবারে অরুচি হতে পারে।

৮. ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।

তবে রোগের সংক্রমণ বাড়তে থাকা বা কমার সঙ্গে উপসর্গগুলো পরিবর্তিত হতে পারে। তবে এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সময়মত চিকিৎসা না হলে অ্যাপেন্ডিক্স ছিদ্র হয়ে খাদ্যনালীর ভেতরের বিভিন্ন উপাদান, পরিপাক হয়ে যাওয়া খাবারের অংশ ও মল বেরিয়ে পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে পেটের ভেতরে এমনকি রক্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে গুরুতর সংক্রমণ। এ ধরনের ঘটনায় রোগীর জীবনের আশঙ্কাও দেখা দেয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিশ্চিত হওয়ার উপায়

অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে রক্তের পরীক্ষা, পেটের আলট্রাসাউন্ড, প্রস্রাবের পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি করা যেতে পারে।

করণীয়

এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর সর্বপ্রথম করণীয় বিষয় হলো রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। রোগের মাত্রা ও অন্যান্য বিষয় দেখে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সাধারণত অ্যাপেন্ডিসাইটিস একবার হলে বারবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রতিরোধের উপায়

সাধারণত অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্রতিরোধের শতভাগ কার্যকর কোনো উপায় নেই। তবুও কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যেমন–

১. পরিমিত পরিমাণে পানি পান।

২. নিয়মিত আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ।

৩. মৌসুমি ফলমূল গ্রহণ ইত্যাদি।

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে পেটে ব্যথা হলে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

লেখক: প্রভাষক, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ

তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট টিভি