মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি:
উচ্চ ফলনশীল ধানের নতুন জাত ব্রি ধান১০৩ এর সফল ফসল কর্তন ও মাঠ দিবস পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৬নভেম্বর বিকালের দিকে উপজেলার চড়পাড়া ব্লকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 'স্থান ভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণার উন্নয়ন' (এলএসএসটিডি) প্রকল্পের অর্থায়নে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক কার্যালয়।
মাটিরাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম। পুরো অনুষ্ঠান টি সঞ্চালনায় ছিলেন একই কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মীর ওবায়দুর রহমান শাওন।
এছাড়াও, স্বাগত বক্তব্য দেন মাটিরাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম মজুমদার, এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সেলিম রানা। অনুষ্ঠানে বক্তারা ব্রি ধান১০৩ এর ফলন ও বৈশিষ্ট্য উপযোগী এই নতুন জাতের ধানের ফলন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ব্রি ধান-১০৩ এর গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.২ মেট্রিক টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এটি হেক্টর প্রতি ৭.৯৮ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। কৃষকের প্রদর্শনী প্লটে হেক্টর প্রতি ৫.৭৮ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গেছে। তবে ভাল ফলন হলে তা বেড়ে ৬.০২ মেট্রিক টন হতে পারে।
ধানটির গড় জীবনকাল প্রায় ১৩০ দিন (১২৮-১৩৩ দিন)। স্বল্প মেয়াদি হওয়ায় এর পর রবিশস্য চাষ করা সহজ। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। দানা লম্বা ও চিকন, রপ্তানিযোগ্য মানের। কান্ড শক্ত ও প্রশস্ত, গাছ হেলে পড়ে না। ১০০০টি ধানের ওজন প্রায় ২৩.৭ গ্রাম।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ব্রি ধান-১০৩ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্প মেয়াদি একটি জাত, যা পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ার সাথে অত্যন্ত উপযোগী। এ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম, দানাগুলো লম্বা ও চিকন, যা রপ্তানিযোগ্য মানের। স্বল্প সময়ে বেশি ফলন পাওয়ায় এটি কৃষকদের জন্য লাভজনক হবে। আমরা আশা করি, এই জাতটি মাটিরাঙ্গা ও পার্বত্য খাগড়াছড়ি অঞ্চলে ধান উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।” তিনি আরও বলেন, “এলএসএসটিডি প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত উন্নয়ন করে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের কাজ করছে ব্রি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সহযোগিতা ও আগ্রহই এই সাফল্যের মূল ভিত্তি।”
মাঠ দিবসে অতিথিরা আনুষ্ঠানিকভাবে ফসল কর্তন উদ্বোধন করেন এবং ফলন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিজ্ঞানীরা কৃষকদের এই উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী জাতটি চাষ করার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেন। এসময় উপস্থিত কৃষক-কৃষাণীরা এই ধানের বীজ সংরক্ষণ এবং আগামী আমন মওসুমে এই ধান আরোও ব্যাপকভাবে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
দেখছি যা বলছি তা
https://dainikalokitopahar.com/