খাগড়াছড়িতে এইচএসসিতে পাসের হার ৩৫ দশমিক ৫৩, জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ২৫ জন

দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি||
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় খাগড়াছড়ি জেলায় ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। জেলার ৭ হাজার ১২১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ২৫ জন। সামগ্রিকভাবে পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা চট্টগ্রাম বোর্ডের গড় পাসের হারের তুলনায় অনেক কম।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, পুরো বোর্ডে পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন ৬ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১০ হাজার ২৬৯ জন। অর্থাৎ, এ বছর পাসের হার প্রায় ১৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ প্রায় ৪ হাজার কমেছে।

খাগড়াছড়ির সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেলার বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও পাশের হার নেমে গেছে উদ্বেগজনকভাবে।

দীঘিনালা সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগে পাসের হার মাত্র ৩০ শতাংশের নিচে (পাস ২৭৬, অকৃতকার্য ৬১৭), ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাস ৭১ ও অকৃতকার্য ৪৭, বিজ্ঞান বিভাগে তুলনামূলক ভালো—পাস ১৩৮, অকৃতকার্য ২৪।

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাস ১২৮, অকৃতকার্য ২৭৮; মানবিকে ২০৩ পাস, ৩৫৭ অকৃতকার্য; বিজ্ঞানে ১১৬ পাস, ১৫৬ অকৃতকার্য। এখানে মোট ১১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।

খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজেও একই চিত্র—পাসের তুলনায় অকৃতকার্যের হার দ্বিগুণের বেশি। মানবিকে পাস ১১২, অকৃতকার্য ৫৭৭; ব্যবসায় শিক্ষায় ১৫ পাস, ৪৯ অকৃতকার্য; বিজ্ঞানে ৩৭ পাস, ৭১ অকৃতকার্য।

এছাড়া রামগড় সরকারি কলেজে ৪ জন, গুইমারা সরকারি কলেজে ২ জন, টাবালছড়ি গ্রীনহিল কলেজে ২ জন, মনিকছড়ি গিরিমৈত্রী কলেজে ২ জনসহ মোট ২৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, বোর্ডের সামগ্রিক ফল কমার পেছনে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিতি, শিক্ষক সংকট ও প্রাকটিক্যাল প্রস্তুতির ঘাটতি অন্যতম কারণ।

বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪, বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ এবং খাগড়াছড়িতে সর্বনিম্ন ৩৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭৫, ব্যবসায় শিক্ষায় ৫৫ দশমিক ৩০ এবং মানবিকে ৩৭ দশমিক শূন্য ৮। খাগড়াছড়ির ক্ষেত্রেও এই ধারা প্রায় একরকম—বিজ্ঞান বিভাগ তুলনামূলক ভালো করছে, কিন্তু মানবিক বিভাগে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য।

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের এক অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাহাড়ে শিক্ষার অবকাঠামো দুর্বল, পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষক ও মানসম্মত কোচিং সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীরা অনলাইন ও ডিজিটাল শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে। ফলেই মানবিক বিভাগে এভাবে ভরাডুবি ঘটছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় দ্রুত কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, নিয়মিত ক্লাস মনিটরিং, ডিজিটাল লার্নিং রিসোর্স ও স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা নিশ্চিত করা না গেলে আগামী বছরগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

খাগড়াছড়ি জেলার এবারের এইচএসসি ফলাফল শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, এটি পাহাড়ি শিক্ষাব্যবস্থার এক কঠিন বাস্তবতার প্রতিফলন। উন্নত শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই নিম্নমুখী ধারা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।