খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।।
সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতেও পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সমাজসেবা কার্যালয়ে আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালি,মানবিক সহায়তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে উদযাপিত হলো ৩৪তম আন্তর্জাতিক ও ২৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা,এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ।
উদ্বোধনের পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একটি রঙিন শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি টাউন হল চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অফিসার্স ক্লাবে গিয়ে সমাপ্ত হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা, সরকারি–বেসরকারি দপ্তর, এনজিও, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।প্ল্যাকার্ড ও প্রতিবন্ধীতাবিষয়ক সচেতনতামূলক শ্লোগানে মুখর ছিল পরিবেশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন,“প্রতিবন্ধী মানুষ সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের প্রতিভা বিকাশ ও উন্নয়নে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ সহায়তা আরও বাড়ানো হবে। আমরা চাই—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক।”
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ
বলেন “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন প্রতিবন্ধী কল্যাণ কার্ড প্রদান, প্রশিক্ষণ, ভাতা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম আরও জোরদার করছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি। প্রতিবন্ধী নয়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ—এই চিন্তা থেকেই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব।”
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন,
“অনেক প্রতিবন্ধিতাই প্রতিরোধযোগ্য। মাতৃস্বাস্থ্য, নবজাতক সেবা ও সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা কমানো সম্ভব। হাসপাতালে আমরা বিশেষ সেবা ডেস্ক চালু করেছি এবং ভবিষ্যতে বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো হবে।”
জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন,“সমাজসেবা অধিদফতর প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে ভাতা, ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ, শিক্ষাসহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি উদ্যোক্তা তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন মডেল গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।”
বিতরণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম;
দিবসটি উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদফতর ও জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে নানা ধরনের মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়—৬ ভিক্ষুককে গরু প্রদান করা হয় তাদের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে, যাতে তারা জীবিকা নির্বাহে স্বাবলম্বী হতে পারেন।দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মাঝে সাদা ছড়ি ও হুইলচেয়ার বিতরণ করা হয়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে ১৫ লক্ষাধিক টাকার সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হয়।
অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতি ও পরিবেশ;
অনুষ্ঠানে সরকারি–বেসরকারি সংস্থা, এনজিও, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থী, সিভিল সোসাইটি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অফিসার্স ক্লাব চত্বরে প্রদর্শনীতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তৈরি হস্তশিল্প, চিত্রকলা ও বিভিন্ন উদ্ভাবনী কাজ প্রদর্শন করা হয়, যা দর্শনার্থীদের প্রশংসা কুড়ায়।
দিবসের বার্তা: অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার প্রত্যয়:
“প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি,সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি'-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বক্তারা বলেন,
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে কোনো মানুষই পিছিয়ে থাকবে না। প্রতিবন্ধী মানুষকে সক্ষম করে তোলাই টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আলোচনা সভা ও কেক কেটে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
বর্ণাঢ্য আয়োজন, মানবিক সহায়তা ও সচেতনতার বার্তায় শেষ হয় খাগড়াছড়ির প্রতিবন্ধী দিবসের কর্মসূচি।
দেখছি যা বলছি তা
https://dainikalokitopahar.com/