খাগড়াছড়িতে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদ; ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধের ডাক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় জেলাজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ধর্ষণের প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতা আজ থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ক্লাস বর্জন শুরু করেছে। এছাড়া, আগামীকাল বৃহস্পতিবার আধাবেলা সড়ক অবরোধেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী মেয়েটি খাগড়াছড়ি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সে প্রতিদিনের মতো স্থানীয় এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল। রাত সাড়ে ৯টায়ও সে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে বের হন। রাত ১১টার দিকে সিঙ্গিনালা গ্রামের শাসন রক্ষিত বৌদ্ধ বিহারের কাছে মাটি ভরাট করা একটি নির্জন স্থানে তাকে অচেতন অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। জ্ঞান ফিরলে মেয়েটি জানায়, প্রাইভেট থেকে ফেরার পথে তিনজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে মুখ চেপে ধরে ওই জায়গায় নিয়ে গিয়ে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।

পরে তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত তদন্তে নামে। গত বুধবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ শয়ন শীল (১৯) নামের এক যুবককে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বাতেন মৃধা এই গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হবে। এই ঘটনায় জড়িত বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ধর্ষণের প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতা আজ বুধবার খাগড়াছড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। জুম্ম ছাত্র জনতার মুখপাত্র উক্যনু মারমা ঘোষণা করেন, ঘটনার প্রতিবাদে আজ এবং আগামীকাল তিন পার্বত্য জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জন করা হবে। একই সাথে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আধাবেলা সড়ক অবরোধ এবং শুক্রবার নারী নিপীড়ন বিরোধী মহাসমাবেশ পালিত হবে।

এই ঘৃণ্য ঘটনার নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন। জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক নিপু আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমন বর্বরোচিত ঘটনা আমাদের সমাজ ও মানবিক মূল্যবোধকে আঘাত করে। তারা তদন্ত পূর্বক অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সব অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমাজের সবার কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।