পাহাড়ি পথে সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা লজ্জাবতী গাছে

মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পাহাড়ি বাঁক ঘেঁষে ফুটে উঠেছে লজ্জাবতী ফুলের অপরূপ শোভা। ছোট্ট গোলাপি রঙের তুলোর মতো ফুলে ভরে গেছে পাহাড়ি পথের দু’ধার। সকাল-সন্ধ্যায় সূর্যের আলোয় ঝলমল করা এসব ফুলে যেন প্রকৃতি নিজ হাতে রাঙিয়ে তুলেছে মাটিরাঙ্গার পাহাড়ের বুকে সৌন্দর্যের নতুন ক্যানভাস। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ি পথের বাঁকে বাঁকে এখন এই গাছের গোলাপি ফুল ও স্পর্শকাতর পাতার সৌন্দর্য বিমোহিত করছে পর্যটকদের।

প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় এই লজ্জাবতী গাছ (Mimosa pudica)। সাধারণত সমতল বা ঝোপঝাড়ে এদের দেখা মিললেও পাহাড়ি রাস্তার ধারে এদের সরব উপস্থিতি যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। বিশেষ করে মাটিরাঙ্গার পথে-প্রান্তরে রাস্তার ধারে, মাটির সঙ্গে সবুজ গালিচার মতো বিছিয়ে আছে এই গাছ।

পাহাড়ের বিশালতার মাঝে এই ক্ষুদ্র গাছের মিথস্ক্রিয়া পর্যটকদের কাছে এক ভিন্ন বিনোদনের উৎস হয়ে উঠেছে। গাড়ি থামিয়ে অনেককেই দেখা যায় রাস্তার ধারে বসে এই গাছের পাতা স্পর্শ করতে। আঙুলের ছোঁয়া পেতেই পাতাগুলো যেভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তা দেখে মুগ্ধ হন শিশু থেকে বড় সবাই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশে লজ্জাবতী গাছের এই বিস্তার জীববৈচিত্র্যের এক সুন্দর নিদর্শন। বড় বড় বৃক্ষের পাশাপাশি এই ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদগুলো পাহাড়ের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সব মিলিয়ে, পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে এই ‘লাজুক’ উদ্ভিদটি তার নিজস্ব ভঙ্গিমায় সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটক আরমান চৌধুরী বলেন, “পাহাড় দেখতে এসেছি, কিন্তু রাস্তার ধারে লজ্জাবতী গাছের এমন সমারোহ দেখব ভাবিনি। বাচ্চারা তো এই পাতা ছুঁয়েই সময় পার করে দিল। ভোরের আলোয় এই ছোট ছোট গোলাপি ফুলগুলো দেখতে যে কী অসাধারণ, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।”

মাটিরাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৃষা ত্রিপুরা বলেন, “প্রতিদিন কলেজে যাওয়া-আসার পথে রাস্তার ধারে লজ্জাবতী ফুল দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়। মনে হয় প্রকৃতি হাসছে। মন চায়, বইগুলো লজ্জাবতীর পাশে রেখে তাদের নিয়ে কবিতা লিখি।”

প্রকৃতিপ্রেমী জামাল হোসেন জানান, “এই ফুল পাহাড়ের স্বাভাবিক সৌন্দর্যে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের অনেকেই এই গাছ নিয়ে কবিতা লিখছেন। পাশাপাশি অনেক পর্যটক পাহাড়ি পথে ছবি তুলতে থামছেন শুধুমাত্র লজ্জাবতীর জন্য।”

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবু বকর বলেন, “এই গাছগুলো মাটিক্ষয় রোধে সাহায্য করে। যদিও আমরা আগে এগুলোকে আগাছা মনে করতাম, কিন্তু এখন দেখি পর্যটকরা এই ছোট বিষয়গুলোও উপভোগ করেন। এতে আমাদেরও ভালো লাগে। এখন এই গাছ পাহাড়ের সৌন্দর্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

স্থানীয় যুবক রাকিব উদ্দিন জানান, “আগে এই গাছ ঝোপঝাড়ে দেখা যেত। এখন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের ধারে, এমনকি বাড়ির আঙিনাতেও ফুটে উঠছে এর কোমল সৌন্দর্য।”

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক নুসরাত জামান বলেন, “মাটিরাঙ্গার এই পাহাড়ি পথে লজ্জাবতী ফুল যেন স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়। প্রকৃতির এমন দৃশ্য সত্যিই চোখ জুড়ানো।”

মাটিরাঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ বলেন, “লজ্জাবতী ফুল শুধু পাহাড় নয়, মানুষের মনকেও কোমল করে তোলে। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ফুটে থাকা এই ছোট্ট ফুল যেন নিঃশব্দে বলে যায় প্রকৃতিই সবচেয়ে বড় শিল্পী।”

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, “লজ্জাবতী গাছ শুধু সৌন্দর্যই ছড়ায় না, এতে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। এই গাছের পাতা ও শিকড় প্রদাহ, ত্বকের সমস্যা এবং ক্ষত সারাতেও কার্যকর।”