রমজানে তৃষ্ণা মেটাবে আখের রস

মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে তৃষ্ণা মিটাতে আখের রস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিনভর রোজা রেখে ইফতারের সময় রোজাদারদের কাছে শরবতের পাশাপাশি আখের রস অন্যতম।
রমজানে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার দরুন শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দিয়ে তৃষ্ণা বেড়ে যায়। আর এই তৃষ্ণা মেটাতে আখের রস হতে পারে একটি দারুণ স্বাস্থ্যকর সমাধান। রমজানে ইফতারের তালিকায় আখের রস একটি দারুণ সংযোজন। আখের রস প্রাকৃতিক চিনি ও ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ, যা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও খনিজ উপাদান থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।

ইফতারে আখের রস খেলে হজমশক্তি উন্নত হয় এবং অম্লতা কমে যায়। এটি লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং জন্ডিসের ঝুঁকি কমায়।

মাটিরাঙ্গা বাজারে ৩টি স্থানে আখের রস বিক্রি করতে দেখা যায়। তবলছড়ি চত্বরের পাশে ৩ বছর ধরে আখের রস বিক্রি করেন বাবর আলী, তিনি প্রতি বছর আখের বাগান ক্রয় করে একটি হস্তচালিত আখ চিবানো মেশিন দিয়ে আখের রস বিক্রি করেন। প্রতি গ্লাস রস বিক্রি করেন ২০ টাকায় প্রতি কেজি রস বিক্রি করেন ৮০ টাকায়। তিনি প্রতিদিন প্রায় ১২শত থেকে ১৫শত টাকার আখের রস বিক্রি করেন।

মাটিরাঙ্গা সড়কের পাশ ঘেঁষে আখ বিক্রি করেন মো. বেলাল হোসেন তিনি প্রতি কেজি আখের রস বিক্রি করেন ৯০-১০০ টাকায় তার প্রতিদিন বিক্রি হয় ১৫শত টাকার আখ।

এদিকে শাহাজাহান নামে অপর ব্যাক্তি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আখের রস বিক্রি করেন। তাদের তুলনায় শাহাজাহান মিয়ার বিক্রি হয় কম। তিনি দৈনিক ১হাজার টাকার রস বিক্রি করতে পারেন। সকলে হস্তচালিত একটি বিশেষ মেশিন দিয়ে আখ থেকে রস বের করে বিক্রি করেন।

এদের কাছ থেকে প্রতিদিন আখের রস কিনে নেন সবাই। সড়কের পাশে হওয়ার দরুন অনেক পর্যটক নিজেদের বাহন থামিয়ে এখান থেকে আখের রস কিনে নিয়ে যান।

বেলাল হোসেন বলেন, দিনে গরমের কারণে রোজার আগ থেকেই আখের রস বিক্রি ভালো হচ্ছিল। এখন রমজান শুরু হওয়ায় দিনভর তেমন একটা বিক্রি না হলেও ইফতারের সময় ভালোই বিক্রি হয়।

রস বিক্রেতা বাবর আলী বলেন, আমি ৩ বছর ধরে এই স্থানে আখের রস বিক্রি করি। সিজনে পুরো বাগান কিনে নেই। তারপর প্রয়োজন মতো আখ কেটে এনে চিবিয়ে বিক্রি করি। শতকরা ৪০ শতাংশ লাভ হয়। তা দিয়ে কোনমতে পরিবারের ব্যায় বহন করা যায়।

মোহর আলী জানান, আমার পরিবারের সবাই ইফতারের সময় আখের রসটা খুব পছন্দ করে তাই প্রতিদিন ১ লিটার নিয়ে যাই। ইফতারের সময় ১ গ্লাস রস খেলে তৃপ্তি মিটে যায়।

প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি ও শীতল হওয়ায় আখের রস রোজাদারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় মন্তব্য করে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন,
এ রস পানের মধ্য দিয়ে রোজদাররা আলাদা তৃপ্তি পায় । যখন মেশিনের মাধ্যমে আখগুলোকে চেপে রস বের করা হয়, তখন তার সঙ্গে কিছুটা বরফ ও লেবুর রস দিয়ে দেওয়া হয়। এতে রসের স্বাদ আরও বেড়ে যায়।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, আখের রস রোজাদারদের শরীরে পানির ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি, শক্তি সরবরাহ করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য একটি প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর সমাধান।
তিনি আরো বলেন, আখের রসের মধ্যে ভিটামিন সি, বি৬ এবং আয়রন থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ পুনরুদ্ধারে সহায়ক। তবে আখের রস পান করার সময় স্বাস্থ্যকরভাবে প্রস্তুুত করা ও পরিস্কার রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।