চট্টগ্রামে আইন ও বিচার বিষয়ক প্রতিবেদকদের জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জোরদারকরণ’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

রফিকুল ইসলাম, খাগড়াছড়িঃ
জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট আয়োজিত সুপ্রীম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ অংশীদারিত্বে ও সুইডেন দূতাবাসের সহযেগিতায় “Strengthening Investigative Journalism for Law & Justice Reporters” শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের আদালত বিটে কর্মরত ৩১ জন সাংবাদিক এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

রোববার (২০ জুলাই) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কর্মশালা পরিচালক এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক তানজিম তামান্নার সঞ্চালনায় ইনস্টিটিউটের মহা-পরিচালক মোহাম্মদ হিরুজ্জামান এনডিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল ডক্টর আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক এবং ইউএনডিপির আইনের শাসন, বিচার এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা মিজ রোমানা শোয়েগার।

দিনব্যাপী এ কর্মশালায় মিজ রোমানা শোয়েগার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: সাইফুল আলম চৌধুরী এবং এমআরডিআই-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সহায়তা ডেস্কের প্রধান জনাব বদরুদ্দোজা বাবু সেশন পরিচালনা করেন।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে জনসাধারণের নিকট বিচারিক সেবা প্রদানের জন্য প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রস্তাবিত আইনি সংস্কার বিষয়ে রোডম্যাপ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহের আইন বিটের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রতি সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। জনগণের আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে রিপোর্টিং এর কার্যকর দিক নিয়ে আজকের কর্মশালায় ফলপ্রসূ করণকৌশল নির্ধারিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছরের ২৭ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব জমা দিয়েছে। উক্ত প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালসমূহের কার্যকর তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় তৈরির একটি খসড়া অধ্যাদেশ পাঠানো হয়েছে। প্রেরিত প্রস্তাবে সচিবালয়ের একটি প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম এবং কার্যপ্রণালী ও কার্যবণ্টন বিধিমালার সংশোধনীও রয়েছে। বর্তমানে, বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা এবং ছুটির বিষয়ে বিদ্যমান দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটাবে। যার মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।

সুপ্রিম কোর্টের প্রদত্ত সেবার মান উন্নয়নের ব্যাপারে প্রধান অতিথি বলেন, প্রধান বিচারপতি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেন। এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সেবা প্রদান সহজ করা, অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং রেজিস্ট্রির মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা।

হেল্পলাইন পরিষেবা চালু করা প্রসঙ্গে ডক্টর আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সরাসরি নির্দেশনায় গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একটি হেল্পলাইন পরিষেবা চালু করা হয়। ০২ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা হেল্পলাইন পরিচালনা করেন এবং সেবাপ্রার্থীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেন। এই পরিষেবাটি রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল ১০:০০ টা থেকে বিকাল ৪:০০ টা পর্যন্ত (সরকারি ছুটি ব্যতীত) চালু ছিল। গত ২২ জুন ২০২৫ তারিখে সুইডেন এবং ইউএনডিপির মধ্যে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জুডিশিয়াল হেল্পলাইন চালু করার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যা বিচারপ্রার্থীদের প্রবেশাধিকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক দ্রুত সেবাপ্রদানের একটি কার্যকর পদক্ষেপ।

তিনি আরো বলেন, গত বছর মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গৃহীত ‘কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন উদ্যোগ’ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা জোরদার করার প্রতি তাঁর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। একটি ব্যাপক বিচারিক সংস্কার কর্মপরিকল্পনার স্পষ্টকরণ এবং প্রগতিশীল বাস্তবায়নের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জিত হয়েছে, যার মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পুনরুজ্জীবন, অধস্তন বিচার বিভাগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতি প্রণয়ন এবং একটি পৃথক বিচারিক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রগতি অন্যতম। বিচারিক সেবা প্রদান উন্নত করতে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং বিচার ব্যবস্থায় জনআস্থা বাড়াতে ১২-দফা নির্দেশনা জারি এবং সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইনের মতো সহায়তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৌশলগতভাবে অগ্রগতি অর্জন করা হয়েছে।

এসময় প্রধান অতিথি বলেন, “বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিচার বিভাগের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”

শুভেচ্ছা বক্তব্যে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. মারুফ নাওয়াজ বলেন, “আইনি ও ন্যায়বিচার সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনকারী সাংবাদিকদের গুরুত্বের কথা বলেন। তিনি ইউএনডিপি এবং সুপ্রীম কোর্টের সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।”

মহাপরিচালক হিরুজ্জামান বলেন, “দেশের বিদ্যামান আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী করতে আইন প্রতিবেদকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি গণমাধ্যমকর্মী ও আইন প্রতিবেদকদের ভূমিকা চলমান আইনি সংস্কার কার্যক্রমে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।”

ইউএনডিপির আইনের শাসন, বিচার এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা রোমানা শোয়েগার বলেন, “আইন ও বিচার বিষয়ক সাংবাদিকরা জনগণ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেন।” তিনি আরো বলেন, “সাংবাদিকতা জনগণের আস্থা গড়ে তোলায় এবং বিচার বিভাগের কার্যক্রম জনগণ যেন অনুসরণ করতে পারে তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

এসময় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহের আইন বিটের সাংবাদিকবৃন্দ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রতিনিধিবৃন্দ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টমিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস আব্দুল কাইয়ুম, এনআইএমসি এবং জেলা প্রশাসনের-এর কর্মকর্তাবৃন্দ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালা শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।