পাহাড়ে সম্ভাবনা আছে, দরকার শুধু একটু দৃষ্টি আর সহায়তা; লামায় রাস্তা নেই টোল আছে

মো. ইসমাইলুল করিম, প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদ লামায় কলা চাষ এখন শুধু ফল চাষ নয় একটি সম্ভাবনার নাম। দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে স্থানীয় ক্ষুদ্র চাষিরা উৎপাদিত কলা বাজারে পৌঁছে দিচ্ছেন অক্লান্ত পরিশ্রমে। এই কলা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তেচট্টগ্রাম, কক্সবাজার, এমনকি ঢাকায়ও। ফলে পাহাড়ের অর্থনীতিতে আসছে নতুন গতি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহাল দশা হওয়ায় টোল খরচ আদায় করা হচ্ছে।চাষিরা জানান, পাহাড়ি মাটিতে সারা বছরই কলা উৎপাদন হয়, তবে বর্ষা মৌসুমে ফলন সবচেয়ে বেশি। লামা অঞ্চলে বাংলা কলা ও চম্পা কলা প্রধান হলেও চাপা সরবি ও সাগর কলারও আবাদ হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। আগস্ট থেকে অক্টোবর এই সময়টিতে সবচেয়ে বেশি কলা বাজারে আসে।পাহাড়ের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা নাইক্ষ্যং, চিকনঝিরি, টিয়ারঝরি থেকে প্রতিনিয়ত কলা বাজারে আনেন পাহাড়ি বাঙালি চাষিরা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা এবং বাজারজাতকরণের সীমাবদ্ধতায় তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। উৎপাদনের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদের নামে নেওয়া টোল খরচ।

চাষি আব্দুল মতলব জানান, প্রতি ছড়ায় ইউনিয়নের নামে ৪ টাকা টোল খরচ দিতে হয়।

বাহির থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী মো. নজরুল বলেন, ছড়াপিছু ৫ টাকা করে দিতে হয় আমাদেরও। সব মিলিয়ে টোল খরচ বাবদ ৯/১০ টাকা খরচ হয় ছড়ায়।লামা বাজার ও রুপসীপাড়া বাজারে সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার বসে কলার হাট। এখান থেকেই ট্রাক ও পিকআপে কলা পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।চাষিরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকার কলায় কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার হয় না। তাই এই কলার স্বাদ, গুণাগুণ ও স্থায়িত্ব সমতলের তুলনায় অনেক বেশি। বাজারে এনে বসে থাকতে হয় না ক্রেতারা লুফে নিচ্ছেন হাতে হাতে।

উপজেলা কৃষি অফিসার (কৃষিবিদ) মো. আশরাফুজ্জামান সোহেল জানান, “লামা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনশীল এলাকা। এখানকার কলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে।তবে এখনো পর্যন্ত সরকারি পক্ষ থেকে কোনো চাষিকে কলা চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়নি, শুধু পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।দেখা গেছে, কলা উৎপাদনে স্বাবলম্বী হচ্ছে লামা, বর্ষায় ফলন বেশি, সারা বছর উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল, বাজারে পৌঁছাতে কষ্ট, ছড়াপিছু ৯–১০ টাকা টোল খরচ বাবদ ব্যয়, সপ্তাহে দু’দিন হাট, দেশজুড়ে যাচ্ছে পাহাড়ি কলা, কীটনাশকহীন, গুণগত মানে উন্নত, এখনো নেই সরকারি প্রণোদনা। চাষিদের দাবি একটাই টোল খরচ কমান, রাস্তা দিন, প্রণোদনায় পাশে দাঁড়ান। পাহাড়ে সম্ভাবনা আছে, দরকার শুধু একটু দৃষ্টি আর সহায়তা।