মো. ইসমাইলুল করিম, প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ে ম্রো শিশুদের জন্য গড়ে উঠা বিদ্যালয় পাওমুম থারক্লা’র শিক্ষার্থীরা।প্রথমবারের মতো ঢাকায় যাওয়ার খবরে দারুণ উচ্ছ্বসিত সবাই। কেবল শিক্ষার্থীরা নন, তাদের সাথে প্রথমবারের মতো এবার ঢাকায় পাড়ি জমাবেন স্থানীয় ম্রো পাড়ার বাসিন্দারাও।
আগামী ১৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে বসবে ‘পাওমুম পার্বণ ২০২৫’। সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবে অংশ নিতেই সুদূর বান্দরবান থেকে এবার তারা ঢাকায় আসছেন বলে জানান।উৎসবের প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করা হয়েছে ‘ফ্রম হিলস টু হোপ’। এতে থাকছে ম্রোদের শিল্পকর্ম, বাঁশের কাজ, নাচ, গান, প্লুংয়ের সুর (বাঁশি), থিয়েটার আর শিশুদের বানানো কারুকাজ। সঙ্গে থাকবে ম্রো খাবার, নারীদের হাতে তৈরি বয়নশিল্প আর ম্রো প্রবীণদের গল্প।বান্দরবানের ম্রো শিশুদের জন্য গড়ে উঠা পাওমুম থারক্লার স্কুল শিক্ষার্থীদের জীবন সেখানকার অন্য স্কুলগুলোর মতো নয়। স্কুলের শিক্ষায় তাদের রয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা। রয়েছে সীমাবদ্ধতাও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবানের লামা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গজালিয়া ইউনিয়ন। এখানেই রয়েছে দুর্গম চংককপাড়া গ্রামটি। সেখানে সরাসরি পৌঁছানোর কোনো সহজ পথ নেই। লামা থেকে প্রথমে কিছুটা পথ সড়কে অতিক্রম করতে হয়। এরপর জঙ্গলে ঘেরা খাড়া পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামটিতে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ, নিরাপদ পানি, মোবাইল নেটওয়ার্ক বা হাসপাতালের মতো মৌলিক সেবাগুলোর কোনোটি নেই। চারপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একটি বিদ্যালয়ও পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালে ফ্রিল্যান্সার শাহরিয়ার পারভেজের সঙ্গে স্থানীয় তরুণ উথোয়াইয়ই মারমাসহ আরও কয়েকজনের প্রচেষ্টায় ম্রো জনগোষ্ঠীর সেই পাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পাওমুম থারক্লা’ স্কুল।বর্তমানে আশপাশের পাঁচটি পাড়া থেকে প্রায় ৬৮ জন ম্রো শিশু এখানে পাঠ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে ৩০ জন থাকে হোস্টেলে। শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচজন। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি ম্রো ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, আবাসিকে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ৯ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। কেউ নগদ দিতে না পারলে তার পরিবর্তে চাল, ডাল বা সবজি নেওয়া হয়। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শুভানুধ্যায়ীরাও নিয়মিত শিক্ষা সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা পাঠান। গত ১০ বছর ধরে এখানকার শিশুরা পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি নিজেদের ভাষা, গান ও গল্পও শিখে আসছে।আরেকজন উদ্যোক্তা শাহরিয়ার পারভেজ ম্রো শিশুদের এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে জানালেন, পাহাড়ে স্কুল পরিচালনা করা ভীষণ কঠিন। তাই এই মুহুর্তে এসব শিশুদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে স্থায়ী একটা তহবিল গড়ার ভীষণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো সেটাও সম্ভব বলে জানালেন এই ফ্রিল্যান্সার।
পাহাড়ের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা উথোয়াইয়ই মারমা জানালেন, পাহাড়ে শিশুদের শেখার সুযোগ খুবই সীমিত। ম্রো ভাষা ও সংস্কৃতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাওমুম থারক্লা এই সংস্কৃতি ধরে রাখতে চায়। আর সেই কারণেই শহরবাসীর সঙ্গে গল্প ভাগ করে নিতে তারা ঢাকায় আসছে সবাই।
দেখছি যা বলছি তা
https://dainikalokitopahar.com/