

মো. ইসমাইলুল করিম, প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় দরিদ্র পরিবার নিয়ে বসবাস করা আবদুস সাত্তার (৫৫) গুপ্তধন পেয়ে রাতারাতি ধনী হয়ে উঠেছে এমন সন্দেহে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই গুজব স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পরার কারনে পাহাড়ি এলাকাটিতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পাড়াপ্রতিবেশিরা গুপ্তধন পাওয়ার বিষয়টির রহস্য উদঘাটন করতে গভীরভাবে নজরদারি ও আলোচনা সমালোচনা করছেন। ফলে সন্দেহভাজন পরিবারের সাথে পাড়াপ্রতিবেশি কয়েকজনের মধ্যে হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সরজমিনে আলীকদম উপজেলার ২ নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড তারাবুনিয়া নাক্ষ্যং ঝিরি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় একটি বাড়ীর চারদিকে স্থানীয় মানুষজন ঘেরাও করে “মাল পাইয়ে মাল পাইয়ে ” বলে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। তাদের এমন আচরণে বিরক্ত হয়ে সন্দেহভাজন আবদুস সাত্তারের পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছে। পেশায় পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি করে সংসার চালানো আবদুস সাত্তার উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের তারাবুনিয়া এলাকার আবদুল মতলবের ছেলে।এলাকাবাসী সাংবাদিকদের খবর দিয়েছে জানতে পেরে আগে থেকে ওই বাড়ির উঠানে কয়েকটি চেয়ার বিছিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যাবেলা সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি মাটির তৈরি টিনের চালের ঘর থেকে খালি গায়ে বের হয়েছে আব্দুর সাত্তার। মাথায় সাদা রঙের চাঁদ ও ৪ তারকাযুক্ত টুপি, গলায় কৃত্রিম ফুলের মালা ঝুলিয়ে রেখেছে। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করে জড়িয়ে ধরতে চাইলেন। একই সাথে একজনের পর একজন করে একই রকমের মালা পরে পরিবারের সকলে বের হয়ে আসলেন। পরবর্তীতে ছবি নিতে চাইলে শার্ট পরিধান করে আসেন।
এ সময় গলায় মালা পরা ব্যক্তিরা হলেন আবদুস সাত্তারের স্ত্রী বুলবুল আক্তার (৪৫), তার শালী হাসনা আরা (৩০) এবং ভায়রা শাহা আলম (৪০)। সকলের বাড়ি একই এলাকার হলেও শাহা আলমের বাড়ী কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ায়। বাড়ির সামনে আগে থেকে বিছিয়ে রাখা চেয়ারে বসে আবদুস সাত্তার বলেন, আপনাদের লোকজন খবর দিয়ে এনেছে আমার বিরুদ্ধে গুজব রটানোর জন্য। আমি এবং আমার স্ত্রী দুইজন দুই মাজারে বাইয়াত নিয়েছি। প্রতিবছর আমাদের হাতে টাকা পয়সা আসলে আমরা মেলার (ওরস) আয়োজন করি, বাহির থেকে আসা ও স্থানীয়দের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াই। এ বছর তাই করেছি। জিকির, উৎসব ও আনন্দ করি।তিনি আরও বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী ঘরের ভেতর আসন বসিয়েছি। আমরা হজরত আলী (রা:) সহ সকল মাজারে পীর আউলিয়ারদের স্মরণে জিকির ও গান করি, ডোল বাজিয়ে নাচানাচি করি। স্বর্নের ডেক পেয়েছে এসব মিথ্যা কথা। এসব বলে তারা আমাদের উপর আক্রমণ করতে চায়। আমাদের সাথে ঝামেলা করে। এসব কথাবার্তা স্থানীয়রা শুনে চিৎকার করে বলতে থাকে এবস পাও কথা। স্বর্ণের ডেক পেয়েছে তা একা একা ভোগ করতে এসব আয়োজন করেছে। স্বর্ণ বিক্রি করতে বাহির থেকে বিভিন্ন মানুষ ও আত্মীয় স্বজনদের ডেকে এনেছে। তাদের এসব লোক দেখানো আয়োজনে ও রাতে ডোলের আওয়াজে আমরা ঘুমাতে পারি না জানান উপস্থিত পাড়াপ্রতিবেশিরা।
স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, স্বর্ণের ডেক পাওয়ার পরপরই আবদুস সাত্তারের সকল স্বজন চলে এসেছে। বহিরাগত সহ তারা ৩০-৩৫ জনের মতো হবে। চকরিয়া থেকে মানুষ আসা যাওয়া করছে। ১০ কেজি মিষ্টি খাইয়েছে সকলকে। রাতে বাজার করে এনে বড় আয়োজন করে রান্নাবান্না করছে, খাওয়াচ্ছে উপস্থিত সকলকে। তিনি আরও বলেন, গত ১০ দিন ধরে ডোল বাজিয়ে নাচানাচি করে রাতভর। বিরক্ত হয়ে রাতে ঘুমাতে না পারে এসব করতে নিষেধ করলে রাগান্বিত হয়ে যায়। আমাদের ‘মাল পাইছো’ বললে গালাগালি করেতে থাকে এবং বলতে থাকে ১০ মিনিটে সব কিনে ফেলে তোদের এখান থেকে উচ্ছেদ করে দিবো। বাহিরের লোকজনকে স্বর্ণ বিক্রি করতে এনেছে। তা না হলে লাকড়ি কেটে বিক্রি করে সংসার চালানো লোক এসব আয়োজন করতে এতো টাকা পেলো কোথায় থেকে।