লামায় ইউএনও মইন উদ্দিনের নেতৃত্বে পরিবেশ রক্ষায় ও সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড সাফল্য ১ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা

মো. ইসমাইলুল করিম, প্রতিনিধি :
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামা উপজেলায় পরিবেশ রক্ষা ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে সর্বোচ্চ উপজেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ সৃষ্টি করেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈন উদ্দিনের দৃঢ় নেতৃত্বে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব যা ইতোমধ্যে জেলার অন্যান্য প্রশাসনিক ইউনিটের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। আমতলী খালে অভিযান: জব্দ ২ লাখ ২৫ হাজার ঘনফুট বালু বিভিন্ন সময় লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আমতলী খালে অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ২ লাখ ২৫ হাজার ঘনফুট অবৈধ বালু জব্দ করেন ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবায়েত আহমেদ। এর আগে একই দিন সরই ইউনিয়নের তিনটি নির্ধারিত পয়েন্টে বৈধ বালু নিলাম কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হয়। তবে প্রশাসনের নজরে আসে, আমতলী এলাকায় কিছু অসাধু ব্যক্তি শেলু মেশিন ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। খবর পেয়ে দ্রুত অভিযান চালানো হয়। বিপুল পরিমাণ বালি জব্দ করা হলেও অভিযুক্তদের কাউকে পাওয়া যায়নি। অবৈধ বালু উত্তোলনে ছাড় নেই অভিযানের বিষয়ে ইউএনও মো. মইন উদ্দিন বলেন, নদী ও খালের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসন সবসময় জনগণের স্বার্থে ও পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় থাকবে। লামায় কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। যেখানে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রেকর্ড রাজস্ব: ১ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা ২০২৫ সালের (০২ ফেব্রুয়ারি) দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউএনও মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন মোবাইল কোর্ট অভিযানে সরকারের রাজস্ব খাতে আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকা।এ সময়ে ১৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন আইনের আওতায় আদায়কৃত জরিমানার মধ্যে রয়েছে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫: ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩: ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০: ৯ লাখ টাকা (এ আইনে ৭ জনকে কারাদণ্ড) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯: ৫৭ হাজার টাকা।ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন, ২০১৮: ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।পৌরসভা আইন, ২০০৯: ১৯ হাজার টাকা।পেট্রোলিয়াম, সড়ক পরিবহন, বন ও তামাকজাত দ্রব্য আইন: মোট ৫৬,৪০০ টাকা জরিমানা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বালু নিলাম কার্যক্রম থেকে একাই সরকার পেয়েছে ৬৭ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ টাকা রাজস্ব, যা উপজেলা পর্যায়ে এক বিরল সাফল্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৪৫টিরও বেশি অভিযান, পরিবর্তনের ছোঁয়া। লামা উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে ৪৫টিরও বেশি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানের ফলে বালু ও মাটি দখল প্রতিরোধের পাশাপাশি ভেজালবিরোধী তৎপরতা, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ ও ওজন কারচুপি প্রতিরোধে এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। একসময় নির্বিচারে নদী খনন ও পাহাড় কাটায় প্রকৃতি বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল:কিন্তু ইউএনও মঈন উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ।তিনি নিয়মিতভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশবাদী সংগঠন, সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জনগণের আস্থা অর্জন সরই ইউনিয়নের স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন,আগে খালের পাড় কেটে বালু তোলা হতো, ফলে খাল শুকিয়ে যেত। এখন ইউএনও স্যারের উদ্যোগে এসব বন্ধ হয়েছে। বাজারেও নিয়মিত তদারকি হয়, ওজনে ঠকতে হয় না।স্থানীয় পরিবেশকর্মী আব্দুল গফুর বলেন, লামায় এখন পরিবেশের ভারসাম্য অনেকটা ফিরে এসেছে। ইউএনও স্যারের নেতৃত্বে প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের আস্থা জুগিয়েছে।সুশাসনের মডেল উপজেলায় রূপ নিচ্ছে লামা ইউএনও মো. মঈন উদ্দিন বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বার্থ রক্ষা ও স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের আয় বৃদ্ধি করাই আমাদের লক্ষ্য। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে লামাকে আমরা একটি সুশাসন ও পরিবেশবান্ধব মডেল উপজেলায় রূপ দিতে পারব।বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাঠ প্রশাসনের এমন কার্যকর, স্বচ্ছ ও জনমুখী পদক্ষেপ কেবল লামা নয় পুরো বান্দরবান জেলার জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠছে। প্রশাসনের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে লামা ভবিষ্যতে সুশাসন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আদর্শ মডেল উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে জানায়।