
মো. ইসমাইলুল করিম, প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামায় মিরিঞ্জা ভ্যালীতে আকাশ-মেঘ ভ্রমণপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট উচুঁতে অবস্থিত এই মিরিঞ্জা ভ্যালী। এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল পাহাড় আর মেঘের খেলা উপভোগ করা। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। এখানে মেঘের সাথে পাহাড়ের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতি এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ, আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলোতে যেন সৌন্দর্য আরো বৈচিত্র্যময়। বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ পার্বত্য জেলায় মেঘ-পাহাড়ের খেলা দেখার পাশাপাশি প্রকৃতিকে সঙ্গে পর্যটকদের অনাবিল আনন্দ দিতে চিরসবুজ সাজে সেজেছে লামায় মিরিঞ্জা ভ্যালী। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া হতে-আলীকদম সড়কে ২৭ কিলোমিটার দূরে লামা উপজেলায় অবস্থিত এই মিরিঞ্জা ভ্যালী পর্যটন কেন্দ্র। নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বুকচিরে আকাশ ছোঁয়া চিরসবুজ শান্তিধাম। এখানে প্রতিদিন দেখা যায় পাহাড় ও মেঘের মিতালী। পর্যটকদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে এ পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে গেলে যে কারো মনে প্রকৃতিপ্রেম জাগবেই। এছাড়া পাহাড়ি পল্লী ঘরের আদলে তৈরী মাচাং ঘর। বাতাস ও বাশের বেড়ায় ছিদ্র থেকে তাকালে দেখা মিলে রাতের অন্ধকার আকাশের হাজার তারার মেলা।মিরিঞ্জা ভ্যালী পর্যটন কেন্দ্রটি ০২ একর জায়গা পাহাড় জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। লামা শহর থেকে আঁকাবাঁকা সড়ক বেয়ে যেতে হয় এই কেন্দ্রটিতে। লামা শহর থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালী দুরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার।
পাহাড়ে উঁচুতে পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্ট হিসেবে তৈরী করা হয়েছে বাশের তৈরী ২টি মাচাং ঘর। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্তে জন্য রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নীচে কয়েকটি তাবু ঘর। এদের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে রাতে চিকেন ফ্রাই,বিরায়ানী সহ নানা পদে খাবার। কেন্দ্রটি চারিপাশে নিরাপত্তা রয়েছে বেশ মোটামুটি। ২০২১ সালে গড়ে তোলা পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়েছে ২০২২ সালে। তাছাড়া এই মিরিঞ্জা ভ্যালী পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে উঠার ফলে কর্মসংস্থান হয়েছে ছয়জনের, ভবিষ্যতেও আরো কর্মসংস্থান বাড়াবে বলে আশ্বাস পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
কথা হয় মিরিঞ্জা ভ্যালীতে নোয়াখালী, ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সৈয়দ, আবির ও রুপালী একটি দলের সাথে। তারা জানিয়েছেন, সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ভ্যালীটি অনেক উপরে। চারিদিকে উচু উচু পাহাড় আর সবুজের ঘেরা। এই ভ্যালীতে না আসলে জানতেন না প্রকৃতি এত সুন্দর। তাছাড়া ভোর হলে মেঘের কুয়াশা চাদরে ঢেকে রেখেছে পাহাড়কে। এমন সৌন্দর্যের স্থানে আসলে যে কারো মনে প্রকৃতিপ্রেম জাগবেই। শীতের এ মৌসুমেও এখানে গাছে গাছে নতুন পত্র-পল্লব, প্রকৃতি নতুন উদ্যমে সেজেছে। বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা মনের ভেতর ঘুরেফিরে।
পর্যটন কেন্দ্রটির কাছেই উপজেলা সদরে আরো থাকছে, মুরং, মার্মা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষার সম্প্রদায় উপজাতির সংস্কৃতি ও লোকাচারের সান্নিধ্য। থাকছে সুখী ও দুঃখী নামের দুটি ১ হাজার ফুট উঁচু ২টি পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী। এমন চিন্তাধারা ও বুদ্ধিমত্তা যেন মন জয় করেছে পর্যটকদের।