
॥মোঃ নুরুল আমিন, স্টাফ রিপোর্টার॥
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। এ জেলায় শান্ত সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে সারি সারি উঁচু নিঁচু পাহাড়। ইতোমধ্যে পাহাড়ে প্রকৃতিতে লেগেছে শীতের পরশ। প্রকৃতি যেন ধীরে ধীরে বদলে নিচ্ছে নিজের সাজ। ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই জানালা খুলে দেখা যায় পাহাড়গুলো কুয়াশায় মোড়ানো, কাপ্তাই হ্রদের ছোট্ট ছোট্ট ঢেউয়ে কুয়াশার আভা, যেন এক মায়াময় আবরণে ঢাকা পাহাড়। পাহাড়ের আঁকা বাঁকা সড়কে সামান্য দূরত্বেও কিছু দেখা কঠিন হয়ে পড়ছে। সড়কের দু’পাশে গাছের পাতায় আর মাকড়সার জালে মুক্তোদানার মত ঝুলে আছে শিশিরবিন্দু। দৃষ্টিনন্দন সেই দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয় প্রশান্তিতে। সূর্যের আলোর দেখা মিলছে খানিকটা দেরিতে। বাতাসে হালকা শীতের ছোঁয়া, কিন্তু এখনো তীব্র ঠান্ডা পড়েনি। তাই এই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালগুলো যেন একরাশ শান্তি ও রোমাঞ্চ এনে দেয়। এদিকে, শীতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে পার্বত্য পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটি। যেন শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটক বাড়তে শুরু করেছে। শীতের শিশির ভেজা সকালের পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণপিয়াসু মানুষের আনাগোনা বাড়ার কারণে বদলাতে শুরু করেছে এই জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর দৃশ্যপট। শহরসহ আনাচে-কানাচে বিনোদন ও দর্শনীয় স্পটগুলোতে এখন পর্যটকদের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। বিশেষ করে সরকারী ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। শহরের আবাসিক হোটেল গুলোতে বুকিং আছে মোটামুটি।
এক দিক দিয়ে এই শীতের মৌসুম হলো পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। প্রচুর এই শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন সবটুকু উজাড় করে দিয়ে পেখম মেলে বসে আছে এই এলাকার পর্যটন শিল্পের সৌন্দর্য বিকাশে। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরের আইকন খ্যাত ঝুলন্ত সেতু ও পলওয়েল পার্কে পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়। সেখান থেকে পর্যটকরা ছুটছেন মেঘের রাজ্যে সাজেক, শুভলং ঝর্ণা,আরণ্যক, রাজবন বিহার,আসামবস্তি দৃষ্টিনন্দন সড়কে লাভ পয়েন্ট, মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতিসৌধসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য এই অঞ্চলের সহজ-সরল পাহাড়ি-বাঙালি মানুষগুলোর আয় রোজগারও। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের কারুকাজ, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের তৈরি তাঁতের কাপড়সহ ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাগুলোর বেচা-বিক্রিও জমে উঠেছে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মাহমুদা বেগম জানান, রাঙ্গামাটির পাহাড়ের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করে। খুব সুন্দর একটি জেলা। আগে অনেক বার রাঙ্গামাটিতে ঘুরতে আসছি। তবে রাস্তা-ঘাটগুলো উন্নত হলেও পর্যটন স্পটগুলোর অবকাঠামো উন্নত হয়নি,আরও একটু উন্নত করলে এখানে আরও পর্যটক আসবে। প্রতি বছরই রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসা হয়। পাহাড় দেখলে মনটাও পাহাড়ের মতো বিশাল হয়ে যায়।
কক্সবাজার থেকে আসা পর্যটক ইমরুল কায়েস জানান, রাঙ্গামাটিতে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের কক্সবাজারে সাগর আছে। তবে এখানকার দৃশ্য ভিন্ন। রাঙ্গামাটিতে সবুজ পাহাড়ে আর শান্ত হ্রদ আমাকে মুগ্ধ করেছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক লাভলী আক্তার জানান, রাঙ্গামাটির সবুজ পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদ আমার খুব ভালো লাগে। তবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুবই অগোছালো এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না। এগুলোকে পর্যপরিস্কার ও সংস্কার করা দরকার। তাহলে পর্যটক বাড়বে।
ট্যুরিষ্ট গার্ড মোঃ আলমগীর জানান, দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস ধরে পর্যটন ঝুলন্ত সেতু পানিতে ডুবে ছিল। যার কারণে কোনো পর্যটক আসতে পারেনি। এতে আমাদের জীবন-যাপনে অনেক কষ্ট হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ঝুলন্ত সেতু ভেসে উঠেছে। পর্যটকও আসতে শুরু করেছে। তবে শীতের আগমনী বার্তায় সামনের দিনগুলোতে পর্যটক বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
রাঙ্গামাটি পর্যটন নৌ-ঘাটের ম্যানেজার ফখরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে শীতের মৌসুম শুরু হয়েছে। এই মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাঙ্গামাটিতে পর্যটক আসবে। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে আমাদের ব্যবসা ভালো হয় এবং পর্যটকদের জন্য শতাধিক বোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বোটগুলো ভাড়া হলে সরকার রাজস্ব পাবে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, শীতের মৌসুম শুরু হওয়া ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে পর্যটনকেন্দ্রের সংস্কার চলছে। এতে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য নতুন সংযোজন হচ্ছে শিশু পার্ক এবং ঝুলন্ত সেতুকে আরো আর্কষণ করে তুলতে রঙিন আলোকসজ্জার কাজ করা হচ্ছে। এগুলো হয়ে গেলে পর্যটক বাড়বে এবং সরকার ভালো একটি রাজস্ব পাবে।