
॥মোঃ নুরুল আমিন, স্টাফ রিপোর্টার, রাঙ্গামাটি॥
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করায় কোটা বিরোধী ঐক্যজোটের ডাকা ৩৬ ঘন্টা হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার আগামীকাল ২১ নভেম্বর শুক্রবার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও ৩৬ ঘন্টা হরতালের কারণে তা স্থগিত করেন।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ থেকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২৫ পূর্বে কয়েক দফা স্থগিত হওয়ার পর সর্বশেষ ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল এবং সংশিলষ্ট সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত তারিখকে কেন্দ্র করে ডাকা হরতাল এবং সম্ভাব্য পরিবহন ও নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি বিবেচনায়,আইন-শৃঙ্খলারক্ষা কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিষদ পরীক্ষাটি পুনরায় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পরীক্ষা স্থগিতের ফলে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সকলের যে অসুবিধা হয়েছে, তার জন্য পরিষদ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
এদিকে পরিক্ষা স্থগিত হওয়ায় শুক্রবার (২১নভেম্বর) হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোটা বিরোধী ঐক্যজোট। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা বলেন, যারা হরতাল পালনে আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পরিক্ষা স্থগিত হওয়ায় আমরা হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
তারা আরও বলেন, নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত হউক আমরা এটা চাইনি। আমরা বৈষম্যর বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আগামীকালের হরতাল প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমাদেও আন্দোলন থেমে যায়নি।আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবো জেলা পরিষদ নির্দিষ্ট কোন বার্তা আমাদের দিচ্ছে কিনা।
আমাদের ছয় দাবি হলো- ‘‘৭%কোটা, ৯৩%মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, প্রশ্নপত্র ফাঁস অনিয়মের অভিযোগের কারণে শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, জেলা প্রশাসনের তত্ববধানে প্রশ্নপত্র ট্রেজারীর মাধমে সংরক্ষণ, পরিক্ষা খাতার মূল্যায়ন জেলা প্রশাসনের অধীনে করা, নিয়োগ পরিক্ষার আগে উপজেলা কোটা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা এবং পরিক্ষা শেষে সকল পরিক্ষার্থীও নাম, রোর নাম্বার এবং ঠিকানা প্রকাশ করা।
এদিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে কোটা নয়, মেধাকে প্রাধান্য দেয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার (২০নভেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয় কোটা বিরোধী ঐক্যজোট।
সকাল থেকে হরতালের সমর্থনে রাঙামাটি শহরের বনরূপা, তবলছড়ি, দোয়েল চত্বরসহ ৮-১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছিলো আন্দোলনকারীরা। এতে স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছিলো।
হরতালের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এতে রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। পাশাপাশি শহরের একমাত্র সিএনজি সার্ভিসসহ শপিংমলগুলোও কার্যত বন্ধ ছিলো।
হরতালকে সমর্থন জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখা। সমর্থন জানিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় শহরে মিছিল,সমাবেশও করেছে সংগঠনগুলো। হরতাল ঘিরে রাঙামাটি শহর ছাড়াও বাঘাইছড়ি, লংগদুসহ বিভিন্ন উপজেলায় পিকেটিং করেছে সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। এর আগে বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটাবিরোধী ঐক্যজোটের নেতারা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পত্র উত্থাপন করে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭ শতাংশ কোটা রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কোটা বিরোধী ঐক্যজোটের নেতারা দাবি জানালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নয় জেলা পরিষদের নিজস্ব আইন দিয়েই পরিষদ পরিচালিত হবে বলে জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার।
সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের পরও পার্বত্য জেলার হস্তান্তরিত বিভাগে এখনো ৭০ শতাংশ উপজাতি কোটা বহাল রয়েছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। একই সঙ্গে নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগও তোলেন তারা। প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ও কোটা বরাদ্দ স্পষ্ট না করাকেও তারা নিয়মবহির্ভূত বলে উল্লেখ করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা পদ্ধতি সংশোধনে বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়িত্তশাসিত, আধাস্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকুরীতে/ কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ভিত্তিক ৯৩%, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%, এবং শারীরীক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% কোটার কথা বলা আছে। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ সমূহ সাধারণ মেধা তালিকা সাধারণ মেধা তালিকা হতে পূরণ করা হবে।