সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি।।
৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের (সুপারিশপ্রাপ্ত) সমাজকল্যাণ বিষয়ে প্রথম হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি থানার এস আই (নিঃ) মোঃ রিদওয়ানুর রহমান।
বুধবার ( ২৭ ডিসেম্বর) বেলা ৪ টায় মুঠোফোনে কথা হলে তিনি একথা জানান। তিনি আরো জানান, গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে ৪৩তম বিসিএসের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।এতে মোট ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা যায়, মোঃ রিদওয়ানুর রহমান এর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামুর অন্তর্গত গর্জনিয়া ইউনিয়নে। তিনি মোঃ আবুল হোছাইন ও মাতা মোতাহেরা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। আর উচ্চতর শিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৮ সালে বিএসএস (অনার্স) ও ২০১৯ সালে এমএসএস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন।বর্তমানে তিনি রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানায় উপ-পরিদর্শক(এসআই) হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সমাজকল্যাণ বিষয়ে প্রথম হওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোঃ রিদওয়ানুর রহমান জানান,সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে নিরন্তর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কলমের মাধ্যমে আমরা যা জানতামনা তাও। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ(সঃ) এর প্রতি লাখো কোটি দরূদ ও সালাম যিনি নিজ চরিত্রের মধ্যে আমাদের জন্য রেখেছেন উত্তম শিক্ষা। সদ্য প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে (সমাজকল্যাণ বিষয়ে ১ম স্থান) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।
সিভিল সার্ভিসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত আসতে এই অর্জনের পেছনে আমার মা-বাবা, শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকবৃন্দ, ভাই, নানা-নানীর ও কর্মস্থলের সিনিয়র স্যার ও সহকর্মীদের অবদান সবচেয়ে বেশী। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীসহ তাঁদের প্রতি আজ আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সিভিল সার্ভিসে বর্তমানে ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারই অন্যতম একটি ক্যাডার যেখানে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র ভিশন-৪১ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষিত, দক্ষ ও দূরদর্শী মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য সরাসরি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যদিও তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে এখানে শিক্ষা ক্যাডার অন্যান্য কিছু ক্যাডারের তুলনায় সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে আছে তথাপি জাপান, চীন, দক্ষিণ কুরিয়া বা নর্ডিক কান্ট্রির দেশগুলোর মতো শিক্ষা খাতে বরাদ্দসহ শিক্ষার আধুনিকায়ন সময়ের দাবি যা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
এটুকু পথ পাড়ি দিতে অন্য সবার মতো আমাকেও বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে একটি চাকরীতে থেকে সরকারি দায়িত্ব পালন করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন কাজটি সহজ হয়েছে অত্যন্ত স্নেহাস্পদ, স্বপ্নদর্শী এবং মানবিক সম্মানিত অনেক সিনিয়র স্যার ও সহকর্মীগণের আন্তরিকতার সংস্পর্শের কারনে। বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সুযোগ্য মাননীয় পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, বিপিএম(বার),পিপিএম, বিলাইছড়ি সার্কেল এর সম্মানিত এএসপি জনাব আবুল কাসেম চৌধুরী, বিলাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আকতার হোসেন মহোদয়গণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি। তাঁরা আমাকে সবসময় উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাহস দিয়েছেন পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমার মা-বাবার স্বপ্ন ছিল আমি যেন সিভিল সার্ভিসে যোগদান করতে পারি। তাঁদের স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত করতে পারায় আমি আনন্দিত। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ও পুলিশে চাকরির সুবাদে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। সর্বোপরি, দেশ ও জনগনের জন্য ভাল কিছু করতে পারলে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করা আমার জন্য সার্থক হবে ইনশাআল্লাহ। আমার সেই স্বপ্ন যেন পূরণ হয়ে সবার দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি। পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডারেও যাঁরা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তারাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়া ও এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় ও ভাগ্যোন্নয়নে নিজেকে মনোনিবেশ করবেন সে প্রত্যাশা রাখি।
সর্বশেষ বলতে চাই পদ-পদবি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। পদবির সাথে মানুষের অধিকার রক্ষার দায়িত্বটাও বেড়ে যায়। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, "দেশ তোমাকে কী দিয়েছে সেটা বড় কথা নয়, তুমি দেশকে কী দিয়েছো সেটাই বড় কথা"। সবার সুস্বাস্থ্য, নিরাপদ ও দীর্ঘায়ূ জীবন কামনা করছি। আর বিশেষ ধন্যবাদ জানান তিনি বিলাইছড়ি উপজেলা বাসীদেরও।
দেখছি যা বলছি তা
https://dainikalokitopahar.com/