সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি প্রতিনিধি: রাংগামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার বুদ্ধিজ্ঞানহীন ও মানসিক প্রতিবন্ধী অসহায় দুই ভাই মানবেত জীবনযাপন করছে বলে জানান ক্ষেমানন্দ নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ফেইসবুক আইডিতে । ভিক্ষুটি লিখে জানান, বড় ভাইয়ের নাম রুইয়াপু তঞ্চঙ্গ্যা ও ছোট ভাই চবাইয়া তঞ্চঙ্গ্যা পিতা: মারুল চান তঞ্চঙ্গ্যা।তারা দুজনই ১ নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের দোসরী পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা।
ভান্তে আরও জানান, দুইজনই বুদ্ধি ও মানসিক প্রতিবন্ধী। যখন রুইয়াপু আগে শারীরিক মানিক অবস্থা ভালো ছিলো তখন তিনি বিয়ে করেন সংসার করেন। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান পরিশ্রম করে, দিনমজুর করে, যখন যা পারে যেই ভাবে করে আয় রোজ-গার। রুইয়াপু তাদের সংসারে হাল ঠিক মতো ধরে রেখেছে। রুইয়াপু’র সংসার জীবনে দুই এক বছরের মধ্যে তার স্ত্রী ফুটফুটে এক মেয়ে সন্তান জন্ম দেন। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই স্ত্রী মারা যায়। একদিকে স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরও কিছু দিন পরে রুইয়াপুর একমাত্র আদরের মেয়ে সন্তানও মারা যায়। প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ও একমাত্র আদরের মেয়ে সন্তানকে হারিয়ে শোকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বর্তমানে মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জীবন যাপন করছে। তিনি আরও জানতে পারেন, তাদের নেই কোন জায়গা জমি, নেই কোন বস্তুিভিটা, নেই বাড়িঘর, মানুষের জায়গায় অস্থায়ী ভাবে বসবাস করছে। তার ছোট ভাই চবাইয়া বড় ভাই চেয়ে সামান্য কিছুটা বুদ্ধি জ্ঞান আছে, স্থানীয় মানুষের বাড়িতে গৃহস্থালী কাজে টুকিটাকি সহযোগিতা করে যা পায় টা দিয়ে চাল, ডাল তরি -তরকারি সংগ্রহ করে রান্না করে খাই।
তবে বেশি ভাগ সময় মানুষের কাছে থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে জীবন অতিবাহিত করছে। প্রতিবন্ধীদের ভাইদের অমানবিক দূর্বিষহ জীবন যাপনের কথা চিন্তা করে আপনাদের সবার আন্তরিক সহযোগিতা পেলে একটা ছোট করে টিনের ঘেরা ও টিনের ছানি দিয়ে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে দিতে পারলে তারা কিছুটা হলেও গ্রীষ্ম, বর্ষার সময়ে ঝড় বৃষ্টি ও শীতের হাট থেকে রক্ষা করতে পারবে।
বর্তমানে যে ভাঙ্গাচোড়া বাড়িটা দেখতে পাচ্ছেন এটাও দোছড়ি পাড়া এলাকার স্থানীয় জনসাধারণ মিলে নির্মাণ করে দিয়েছে। জ্বলানি কাঠ সংগ্রহ করা না থাকলে ঘরের বেড়া গুলো খুলে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করে। যার কারণে বাড়ি ঘরের এই অবস্থা। তারা দুই ভাইয়ে এই একটা ছোট রুমে সারা বছর থাকা খাওয়া রান্না-বান্না করে অবস্থান করে জীবন অতিবাহিত করছে। তাদের নেই কোন স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটেশন টয়লেট ব্যবস্থাও। তাদের অসহায় অমানবিক জীবন যাপন কথা চিন্তা করে আপনাদের সবার আন্তরিক সহযোগিতা করছি।
বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসলে এবং এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় তাৎক্ষণিক ভাবে তদের সঙ্গে কথা না হলেও মুঠোফোনে ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রবি চরণ তঞ্চঙ্গ্যা’র সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,বিষয়টি সঠিক।তিনি জানান তাদের নিয়ে আমরা খুবই সমস্যায় রয়েছি। ঠিক মতো কাজও করতে পারে না, সবসময় প্রলাপ বলতে থাকে,যখন তখন কাকে কি বলে তারা নিজেরাও জানেনা। ঘরটাও ভাঙ্গা থাকা ও খাওয়ার সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই, নেই কাপড় চোপড়ও।আমরা সমাজে যা তুলে দিই তা দিয়ে কোনো রকমে চলে।মাঝে মাঝে মাথা ঠিক হলে মানুষের এখানে লাখরীর কাজ করে সামান্য টাকা পেয়ে থাকে। যা পর্যাপ্ত নয়। এজন্য উপজেলা প্রশাসন এবং অন্য কোনো দাতাগোষ্ঠী কাছ থেকে অবশ্যই একটি ঘর, খাদ্য, পোশাক, কাপড়, চোপড় ও অন্যান্য সুবিধা সহযোগিতার প্রয়োজন। যোগাযোগ নাম্বার -০১৮৯০০৩৪৯৫৬।
এই বিষয়ে ১ নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান জানান, প্রতিবন্ধী এবং অসহায় জানি।এধরণের লোকদের ইউনিয়ন পরিষদ হতে কিছুটা হলেও সাহায্য করে থাকি।তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো থাকার ঘর।আমি এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দীলিপ কুমার বড়ুয়া জানান,তারা প্রতিবন্ধি হিসেবে সমাজসেবা অফিস হতে ভাতা পেয়ে থাকেন। এগুলো দিয়ে যা তাদের পর্যাপ্ত নয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, বাড়ি নির্মানের জন্য বরাদ্দ নাই।যেগুলো আছে সেগুলো শেষ হয়েছে। বরাদ্দ আসলে যাচাই বাছাই করে বিবেচনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জামশেদ আলম রানা সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সার্বিক সহযোগিতা করা যাবে।