খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্যা জয়া ত্রিপুরার উদ্যোগে সেলাই মেশিন, তাঁত সুতার বেটি, তন্তু ও নতুন ঘর প্রদান

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
খাগড়াছড়িতে নারীর আর্থিক স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন, কোমর তাঁত বুননের জন্য বেটি তন্তু (মোড়া তৈরির উপকরণ) এবং নতুন ঘর প্রদান করা হয়েছে। এ সহায়তা পাহাড়ি নারীদের আত্মকর্মসংস্থানকে এগিয়ে নিতে এবং ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পকে সমুন্নত রাখতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের মাষ্টার পাড়া এলাকায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে এ সামগ্রী বিতরণ ও নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

স্বনির্ভরতার পথে ছোট উদ্যোগই বড় শক্তি, জয়া ত্রিপুরা; অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উপকারভোগীদের হাতে সেলাই মেশিন, তাঁত সুতার বেটি তন্তু এবং নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন জেলা পরিষদের সদস্য জয়া ত্রিপুরা। তিনি বলেন,“নিজ হাতে কাজ শেখা মানেই আত্মনির্ভর হওয়া। স্বনির্ভরতা অর্জনে ছোট ছোট উদ্যোগই বড় ভূমিকা রাখে। প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা যেন ঘরে বসেই আয় করতে পারে—এ লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন। সেলাই, বুনন কিংবা মোড়া তৈরি শুধু আয়ের পথ নয়; এটি আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।” তিনি আরও বলেন, “যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেলে পাহাড়ের নারীরা ঘরে বসে নিজেদের আর্থিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। ভবিষ্যতেও জেলা পরিষদ এ ধরনের কর্মসূচি আরও সম্প্রসারিত করবে।”

বিশেষ অতিথি আলো’র নির্বাহী পরিচালক অরুন কান্তি চাকমা বলেন,“তাঁত বুনন, মোড়া তৈরি বা সেলাই কাজ—এসবই পাহাড়ি নারীদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী দক্ষতা। আমরা চাই এই দক্ষতা শুধু ঘরের ভেতর সীমাবদ্ধ না থেকে বাজারেও ন্যায্য মূল্য পাক।”

উপকারভোগীদের মুখে খুশির ঝিলিক; সেলাই মেশিন ও তন্তু পাওয়া নারীরা জানান, এই সহায়তা তাদের আয়ের নতুন পথ খুলে দেবে। অনেকে আগে অন্যের মেশিনে ভাড়ায় কাজ করতেন, এখন নিজেদের মেশিনে স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন।

নতুন ঘর পেয়ে বেলছড়ি ইউনিয়নের মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা পারুল আক্তার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা ঘরে সন্তানদের নিয়ে কষ্টে বসবাস করেছি। বর্ষাকালে দুর্ভোগ আরও বাড়ত—থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। এখন জেলা পরিষদের সহায়তায় একটি নতুন ঘর পেয়েছি। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। জয়া ত্রিপুরা ম্যাডাম ও জেলা পরিষদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।”

পাহাড়ি নারীদের জন্য সম্ভাবনার নতুন জানালা- অনুষ্ঠানে এলাকার গৃহিণী, যুবতীসহ বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নারী সদস্যদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন,এই উদ্যোগ নারীদের জীবনমান উন্নয়নে, পরিবারে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।