পানছড়িতে প্রাণিসম্পদ সেবায় ভোগান্তি সরকারি হাসপাতালে নেই ওষুধ, নেই সঠিক তদারকি

আরিফুল ইসলাম মহিন, খাগড়াছড়ি:
পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা। খামারি আর সাধারণ মানুষ প্রতিদিন দৌড়াচ্ছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে। কেউ আসছেন ছাগল বা গরুর চিকিৎসা নিয়ে, কেউ আবার হাঁস-মুরগির রোগে বিপাকে। কিন্তু সেবার আশায় আসা মানুষজন ফিরছেন হতাশ হয়ে।

অভিযোগ, হাসপাতালে গেলে সরকারি ওষুধ মিলছে না। বরং বাজার থেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দামের ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। অথচ সরকার থেকে আসা বরাদ্দকৃত ওষুধ ঠিকমতো ব্যবহার না হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা ফেলে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের টয়লেট ট্যাংকিতে! হাসপাতালের র‌্যাকেও এমন অনেক ওষুধ মজুত আছে।

মুসলিমনগরের জেসমিন আক্তার কষ্টের স্বরে বললেন, “গাড়ি ভাড়া দিয়ে পশু হাসপাতালে এসেও কোন লাভ হয় না। বরং গাড়ি ভাড়াই লস। সরকারী ওষুধ নেই, বাইরে থেকে কিনতে হয়।”

মোহাম্মদপুরের রফিকুল ইসলাম ও কানুনগো পাড়ার দিপক চাকমা জানান, হাসপাতালের ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশন দিয়ে দেন, কিন্তু সরকারি ওষুধ হাতে মেলে না।

নালকাটার অনিল চাকমা ও সাওতাল পাড়ার মাহমুদ অভিযোগ করেন, ওষুধ না থাকার কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভেটেরিনারি সার্জন কবির উল্টো খারাপ আচরণ করেন।

একই হতাশা জানালেন মুরগি খামারি আবুল কালামও। তার কথায়, “বাচ্চা আনা থেকে বিক্রি পর্যন্ত সব চিকিৎসা বেসরকারি ডাক্তারদের দিয়ে করতে হয়। সরকারি চিকিৎসকরা কোনো কাজে আসেন না।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, কাঠামো অনুযায়ী থাকার কথা ১০ জন কর্মীর, কিন্তু আছেন মাত্র ৫ জন। এর মধ্যেও অনেকেই নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না।
ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট শামিম আহম্মেদ নিয়োগের পর থেকে মাঠে কম যান। কম্পিউটার কাজ জানায় অফিস সহকারীর দায়িত্বই বেশিরভাগ করেন। অন্যদিকে অফিস সহকারী কমলা চরণ চাকমা কম্পিউটারে অদক্ষ হওয়ায় অফিসের কাজে গতি নেই।

চেঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা বলেন, “মাঠ পর্যায়ে টিকাদান, খামার পরিদর্শন, উঠান বৈঠকের কথা থাকলেও বাস্তবে কিছুই হয় না। আমাদের সাথে কোন সমন্বয়ও করা হয় না।”

ভেটেরিনারি সার্জন কবির আহম্মদও দায় স্বীকার করে বলেন, “স্টাফরা অনিয়মিত। অসহযোগিতার কারণে সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। জনবলও কম।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আলী মোবাইলে বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি।”