আগামী ৬ অক্টোবর মঙ্গল প্রার্থনায় মেতে উঠবেন পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা

মো. ইসমাইলুল করিম, প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের ছোট রাজার মাঠে ইতিমধ্যেই রথ সাজানোর কাজ চলবে। আর মাত্র কিছুদিন পরই আকাশ ভরে উঠবে রঙ-বেরঙের ফানুসে। আনন্দ-উল্লাসে মুখর হয়ে উঠবে পুরো পাহাড়ি জনপদ। অশুভ বিদায় আর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় মেতে উঠবেন পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

আগামী (০৬অক্টোবর) উদযাপিত হবে প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর আষাঢ় পূর্ণিমার পর থেকে তিন মাস বর্ষাবাস শেষে শুরু হয় এই প্রবারণা। মারমা সম্প্রদায়ের কাছে দিনটি পরিচিত “মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে” নামে। ভক্তদের বিশ্বাস, এ উৎসবের মাধ্যমে শান্তি, সত্য ও সৌন্দর্যের জয়গান ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মনে। গৌতম বুদ্ধ সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের সময় চুল কেটে আকাশে নিক্ষেপ করেছিলেন সেই স্মরণে আকাশে ফানুস ওড়ানো হয়। এ উৎসবকে ঘিরে চলছে নানা আয়োজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা তৈরি, রথযাত্রা, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন ও ফানুস উড়ানো। প্রধান আকর্ষণ বাঁশের তৈরি বিশাল রথ, যা রাজহংসীর আদলে সাজানো হয়। তরুণ-তরুণীরা নিজস্ব ভাষায় গান গেয়ে রথ টেনে বিভিন্ন বিহার প্রদক্ষিণ করেন এবং শেষে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন দেন।

স্থানীয় কারিগররা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে রথ ও কাল্পনিক ভাস্কর্য তৈরি করা হচ্ছে। এবারের মূল আকর্ষণ রাজহংসী আকৃতির রথ। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নানারকম ফানুস ড্রাগন, হাতি, বালিশসহ বিভিন্ন আকারে। জেলার বান্দরবানের ছোট রাজার মাঠে ইতিমধ্যেই রথ সাজানোর কাজ চলছে। বাজারে উঠেছে নতুন ডিজাইনের থামি ও লুঙ্গি, যা কিনে নিচ্ছেন ধর্মাবলম্বীরা। বিহারগুলোতে চলছে আলোকসজ্জা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নানা প্রস্তুতি। বিক্রেতা ও ক্রেতারা জানান, এ বছর বাজারে ব্যাপক বেচাকেনা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রবারণার দিন বিহারে আহারের জন্য থামি কেনা হচ্ছে বেশি। প্রবারণা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং মারমা জানান, নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তার বিষয়ে বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আব্দুল করিম জানান, প্রবারণাকে ঘিরে জেলা পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ও সাদা পোশাকের টিম। রঙিন ফানুস, রথযাত্রা আর আনন্দঘন পরিবেশে পাহাড়ি জনপদে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের এই উৎসব এবারও হয়ে উঠবে সবার মিলনমেলা।