বশির আহাম্মদ, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি।। বান্দরবান লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ইটভাটার মালিক অবৈধভাবে স্কেভেটর লাগিয়ে পাহাড় কেটে, মাটি বনের গাছ কেটে সংগ্রহ করেছেন। এই কারণে পার্বত্য এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ৩০টি অবৈধ ইটভাটা এক দশক ধরে চলছে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলির কোনটিরও লাইসেন্স নেই এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই বেশির ভাগ ইটভাটার অবস্থান।
এই অবৈধ ইটভাটাগুলির কোনটিরও লাইসেন্স নেই এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই বেশির ভাগ ইটভাটার অবস্থান। এই ইটভাটাগুলি পাহাড়ের মাটি,ও বনের কাঠ ব্যবহার করে ইট তৈরি করে এবং এই ইটগুলি বিক্রি করে অবৈধ লাভ করে। এই প্রক্রিয়ায় পাহাড়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং পাহাড়ের উপর বৃষ্টির পানি আস্তে আস্তে নিচে নামে। এর ফলে পাহাড়ের তলায় বন্যা ও ভূস্খলনের ঝুঁকি বাড়ে।
এছাড়াও, এই ইটভাটাগুলি বিশাল পরিমাণে ধোঁয়া ও কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদন করে যা বাতাসের গুণমান ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়। এই ইটভাটাগুলি পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারা ও স্বাভাবিক সম্পদের উপর ক্ষতি করে।
জানা যায়, উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ৩১টি ইটভাটার মধ্যে ১৮টি ইটভাটায় আগুন দিয়েছে ভাটার মালিক। সব কয়েকটি ইটভাটার মালিক অবৈধভাবে স্কেভেটর লাগিয়ে পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করেছেন। এই কারণে পার্বত্য এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলির কোনটিরও লাইসেন্স নেই এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই বেশির ভাগ ইটভাটার অবস্থান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ১৮টি অবৈধ ইটভাটার চুল্লীতে আগুন জ্বলছে। বেশির ভাগ ইটভাটায় কাটা হয়েছে পাহাড়, কিছু কিছু ইটভাটা জ্বালানি হিসাবে পুড়ানোর জন্য মজুদ করা হয়েছে পাহাড়ের বনের কাঠ।
চুল্লীতে আগুন দেওয়া ১৮টি ইটভাটা গুলো হলো- আওয়ামী লীগ নেতা আজিমুল হক আজিমের এর মালিকানাধীন এনআরবি, মোক্তার মেম্বার, কবির আহমেদ ও মহিউদ্দিন গংয়ের বিবিএম, নাজমুল ইসলাম নাজুর ডিবিএম, মোক্তার মেম্বারের ইউবিএম, কবির আহমেদ ও অলি উল্লাহ’র ইউবিএম, শিকলগাটা গিয়াসের এসবিডাব্লিউ, ইউনুস ম্যানেজার ও জুনাইদ গংয়ের ফাইভবিএম, বেদার ও জলিল গংয়ের বিএমডব্লিউ, আরজু ও রিংকু গংয়ের এমএইচবি, বেলাল কোম্পানির এবিসি-৪, এনাম কোম্পানির এমবিআই, মুজিব ও ফরিদ গংয়ের ইউবিএন, বনের কাট পুড়িয়ে অবৈধ ইটভাটার মধ্যে পেকুয়ার মহিউদ্দিনের এমবিএম, ফরিদুল আলমের এফএসি, খায়রুল মাষ্টারের ফোরবিএম, মহিউদ্দিন ও শওকতের মালিকানাধীন ওয়াইএসবি ইটভাটার কোনোটির লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। প্রশাসন মাঝেমধ্যে এসব ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালালেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ চোখে দেখেনি স্থানীয়রা।
আইন অনুযায়ী, বনাঞ্চলের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনে বলা আছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আইন অমান্য করলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড, অন্যূন ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন অমান্য করেই উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে খেয়াল খুশিমতো চলছে ইটভাটা বাণিজ্য।
এ কারণে বেশির ভাগের কোনো ধরনের দণ্ডের মুখোমুখি হতে হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসকদের অনুমোদন ছাড়াই এই ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ১৮টি অবৈধ ইটভাটা।
ইটভাটার পাশের ঘরবাড়িতে বসবাসকারীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালিত হলেও বন্ধ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্টো প্রশাসনকে ঘুষ দিয়েই ইটভাটার মালিকরা এসব ভাটা পরিচালনা করছেন।
এছাড়াও, এই ইটভাটাগুলি বিশাল পরিমাণে ধোঁয়া ও কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদন করে যা বাতাসের গুণমান ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়। এই ইটভাটাগুলি পার্বত্য এলাকার বিভ জীবনধারা ও স্বাভাবিক সম্পদের উপর ক্ষতি করে।
স্থানীয়রা বলেন, এই উপজেলাই কোনোটিতেই ইটভাটায় লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট, আয়কর প্রত্যয়ন ও পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। সব ইটভাটা এক দশকের বেশি সময় ধরে অবৈধ। প্রভাবশালীদের মালিকানা ও ছত্রছায়ায় পাহাড় কেটে ও ফসলি জমির উর্বর মাটি দিয়ে ভাটাগুলো চলছে। কিছু ভাটাতে দিন-রাত বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কাঠ পোড়ানোর ফলে বন উজাড়ের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে। সব কয়টির চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে।
লামা উপজেলা সাধারণ জনগণ বলেন, অবৈধ ইটভাটা থেকে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যদি মোটা অংকের ঘুষ না দিতো তাহলে কোন ভাবেই এই ইটভাটা গুলো চালাতে পারতো না। তিনি প্রতিবেদককে প্রশ্ন করে বলেন, এই যাবৎ প্রশাসন কি একটি ইটভাটাও গুড়িয়ে দিয়েছে? পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ, পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটায় বন্ধ করতে প্রধান উপদেষ্টা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আইনের তোয়াক্কা না করে কিভাবে ইটভাটায় কি ভাবে আগুন দিয়েছে এই বিষয়ে ফাইতং ইউনিয়নের বেশ কয়জন ইটভাটা মালিক নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা পরিচালনা করা হয়।
ফাইতং ইউনিয়নের ইউএমবি নামের অবৈধ ইটভাটা মালিক কবির আহমেদ বলেন, পরিবেশ উপদেষ্টা থেকে অনুমতি নিয়ে আমি ইটভাটায় আগুন দিয়েছি।
অপরদিকে বনের কাঠ দিয়ে ফোরবিএম নামের অবৈধ ইটভাটা মালিক খায়রুল মাষ্টার বলেন, আমরা সবাইকে কিনে ফেলেছি, অভিযান যা পরিচালনা করা হয় তা আমাদের সাজানো নাটক।
এই বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ:দা:) রুপায়ন দেব বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে পার্বত্য এলাকায় কোন ইটভাটা পরিচালনা করতে পারবে না। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমরা অবিযান চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ইটভাটাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যারা নতুন করে ভাটায় আগুন দিয়েছে তাদেরকে সামনে আরো কঠোর অভিযানের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, পার্বত্য এলাকায় ইটভাটা করা জন্য আমরা কোন অনুমোদন দেওয়া হয় নাই। যে সকল ইটভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে বা কর্যক্রম চালাচ্ছে আমরা সেখানে অবিযান পরিচালনা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।