লামায় অবৈধ বালু উত্তোলনে বেপরোয়া বালি খেকো সিন্ডিকেট

বিপ্লব দাশ, লামা প্রতিনিধিঃ বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়নে অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালি উত্তোলন করে বিক্রির মহা উৎসবে মেতেছে একটি বালি খেকো সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক প্রভাব পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে ফকিরাখোলা ও কালাপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দিন ও রাতে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালি উত্তোলন করছে।

এবিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সভায় জানানোর পর সংশ্লিষ্ট কর্তারা কোন ব্যবস্থা নেননি বলে জানান ফাঁসিয়াখালি ইউপি চেয়ারম্যান।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মহিলা সদস্য জোসনা আক্তার লিলি ও তার স্বামী পারভেজ আলম বালি ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,উপজেলার ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়নের ফকিরাকোলা কালাপাড়ায় বিভিন্ন স্থানে মেশিন দিয়ে খাল থেকে বালি উত্তোলন করছে। উত্তোলনকৃত বালি ট্রাকে ট্রাকে দিন দুপুরের নিয়ে যাচ্ছে লামা-চকরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায়। বালি উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে খালের দু’পাশের বাড়ি, রাস্তা, ব্রিজ, পাহাড়সহ ফসলি জমি। অনুমতি বিহীন খালের বিভিন্ন পয়েন্টে মেশিন দিয়ে অবাধে বালি তুলে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন সেই সাথে অবৈধ ভাবে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন আয়াত উল্লাহ ও আজিজুল হকের সিন্ডিকেট।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট অবৈধ বালি উত্তোলন ও পাচা সিন্ডিকেট। বালি উত্তোলন ও পাচারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন লামা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক। সরকার দলীয় রাজনৈতিক পদবীকে পুঁজি করে অবৈধ ভাবে রমরমা বালির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাপটে এলাকা কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আয়াত উল্লাহ ও পল্লী ডাক্তার আজিজুল হকের নেতৃত্বে ৪০ জনের একটি সিন্ডিকেট অবৈধ বালি উত্তোলন ও পাচারের জড়িত। কাউকে পরোয়া না করে বালি উত্তোলনের পিছনে গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। দুয়েকটা লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা আরও জানায়,আজিজুল হক ও আয়াত উল্লাহের মেম্বারর সিন্ডিকেটে আরও রয়েছে, জয়নাল আবেদীন ভুট্টু,জসিম, এমরান সদাগর নেজাম, নাছির, ইউসুফ নবী,আবুল হোসেন সহ ৩০ জন।

বালি সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে বালি উত্তোলনের অংশীদার হতে। বালি উত্তোলনের সময় বিভিন্ন জনকে ম্যানেজ করে বালি উত্তোলন করতে হয়েছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, কেউ বালি উঠাতে বাধা দিতে গেলে গুম করে ফেলার হুমকির পাশাপাশি শারীরিক লাঞ্ছিত করে বালি সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

অবৈধ বালি উত্তোলনকারী পল্লী চিকিৎসক আজিজুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এখন তো তেমন বালি নাই। খুব কম বালি বের হয়। আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে অযথা বালি নিয়ে পড়ে না থাকতে। পরে দেখা হবে বলে ফোন কেটে দেন।

মহিলা ইউপি সদস্য জোসনা আক্তার লিলি বলেন, আমি বা আমার স্বামী বালির ব্যবসা করি না। মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণের জন্য বালি এনেছি। আমি বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছি বলে আমাকে ও আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে। তবে আমি নিজে ব্যবসার সাথে জড়িত নই।

ডুলাহাজারা ইউপি সদস্য আয়াত উল্লাহ বলেন, এখন ৪০ জনের একটি সিন্ডিকেট বালি উত্তোলন ও পাচার করে। বালি পাচারের সাথে নারী ইউপি সদস্য জোসনা আক্তার ও তার স্বামীসহ অনেকে জড়িত। চকরিয়ার বালি মহলের পারমিটের কাগজ ব্যবহার করে লামা ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়নের খাল থেকে বালি উত্তোলন করে পাচার করছে। ৬ শত টাকা করে ডুলাহাজারা পার্টির কাছে বিক্রি করে ইমরান সওদাগর, আজিজরা।

ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন চৌধুরী বলেন, ডাক্তার আজিজের নেতৃত্বে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা সভায় বালি উত্তোলনের বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। এখন তারা (প্রশাসন) যা ব্যবস্থা নেওয়া নেবে বলে জানান।

এই বিষয়ে লামার নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার শান্তনু কুমার দাশ বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের অভিযান পরিচালনা করে শিগ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।