ফুলের সমারেহ ঘেরা ওয়াগ্গা-সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহারে নতুন সংযোজন লাভী শ্রেষ্ঠ শিবলী ও মার বিজয়ী উপ-গুপ্ত অহর্ত প্রতিমূর্তি 

এম বাবুল, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাপছড়িতে ওয়াগ্গা – সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহারটি ১৯৯৩ সালে স্থাপন করা হয়। রুপাধন তনচংগ্যা ও রত্নসেন তনচংগ্যা প্রায় ১ একর ভূমি দান করেন। বিহারটি শুরতেই ছন ও মৌলি বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি পরে মাটির তারপর পাকা ভবন রুপান্তর করা হয়। উঠতেই বিহারের সামনে মোম বাতি ও আগর বাতি প্রজ্জ্বলন ঘর। এখানে বিহারে আগত পূণার্থীগণ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনায় বৌদ্ধের উদ্দেশ্যে মোম বাতি ও আগর বাতি প্রজ্জ্বলন করে থাকেন।

এর পরে মূল বিহার ঘরটি। বিহারের পূর্ব কোণে রয়েছে সীমাঘর। এ ঘরে ভিক্ষু করাসহ ভিক্ষুদের বিনয় কর্ম সম্পাদন ( বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিয়ম- নীতি) করা হয়ে থাকে। বিহারের উত্তর কোণে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে লাভী শ্রেষ্ঠ সিবলী অর্হত প্রতিমুর্তি ও মার বিজয়ী অর্হত প্রতিমুর্তির ঘর। এই প্রতিমূর্তির কিছু বিশেষত্ব আছে লাভী শ্রেষ্ঠ সিবলী অর্হতকে পূজা করিলে ধন-সম্পদের অভাব পূরণ হয়। মার বিজয়ী অর্হতকে পূজা করিলে দুঃখ -দূর্দশা হতে রেহাই পাওয়া যায় বলে তারা জানান। পুরো বিহার স্থান জুড়ে রয়েছে ফল ও ফুলের সমারেহ রং-বেরঙের নানা ফুল। একটু সামনে এগোতে মোমবাতি প্রজ্জলন ঘরের চারদিকে দৃষ্টিনন্দন নানারকম ফুল শোভা পাচ্ছে। আশেপাশে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য ফুলের সমারোহ। সমগ্র বিহার ঘুরে আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টবে সাজানো ফুলের বাগান।

বিহারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার তনচংগ্যা বলেন,আমাদের বৌদ্ধ বিহারে বৈচিত্র্য আনার প্রচেষ্টা চলছে। এরিমধ্যে তৈরি হয়েছে লাভী শ্রেষ্ঠ শিবলী অহর্ত প্রতিমূর্তি ও মার বিজয়ী উপ-গুপ্ত অহর্ত প্রতিমূর্তি। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এলাকার দায়ক-দায়িকা, সমাজের বিভিন্ন এলাকার দানশীল ব্যক্তির অর্থায়নে এটি তৈরি করা হয়েছে।বর্তমান বিহারের অধ্যক্ষ ক্ষেমানন্দ ভিক্ষু ও সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার তনচংগ্যা বিহারের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বাগান বিলাস এবং চল্লিশ প্রজাতির ফুলের চারা রোপন করা হয়। যেসব ফুলের শোভা দেখা যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে, মুন লাইট জুয়েল, বাটার কার্প,রিফাল গেন্স,কপি বাটিক, গেইছা, চাকুরা, কোরাল মাসুরী,জবা, অলোকানন্দ,হাসনা হেনা,মাধবীলতা, রঙ্গন ইত্যাদি। প্রতিদিন প্রকৃতির সুশোভিত সবুজ বিহারে ঘুরতে আসেন সব বয়সের দর্শনার্থী বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা। প্রকৃতির টানে ব্যস্ত সময়ে একটু অবসরে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন এখানে। যেখানে প্রকৃতির মধ্যে যুক্ত হয়েছে এই ফুলের বাগান।

প্রার্থনা করতে আসা দায়ক-দায়িকা জানান, ফুল দেখে মনটা হালকা হয়ে গেছে। বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছেন বলেন, প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি। পাহাড়ের উপরে এমন দৃশ্য যে কারো মন ভালো করে দেয়। তাই এখানে ঘুরতে এসেছি। ফুলের সঙ্গে ছবিও তুলেছি। কথা হয় বিহারের অধ্যক্ষ ক্ষেমানন্দ ভিক্ষু’র সাথে তিনি বলেন,গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়েগেট থেকে শুরু করে,বিহারের আশে পাশে শুরু করে ভেতরের অংশ সাজানো গোছানো ও পরিপাটি করে রাখার চেষ্টা করছি। বিহারের আনাচে-কানাচে ফুলগাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করেছি। এখানে স্থানীয় মানুষ এমনকি বিভিন্ন জায়গা থেকেও লোকজন দেখতে আসছেন।এসব সৌন্দর্য মানুষের মনকে পুলকিত করে।