
হাবীবুল্লাহ মিসবাহ, রাজস্থলী
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে ৭ মাস কারাভোগের পর মানবেতর জীবনযাপন করছেন রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়ার বাসিন্দা আবু তাহের নামের এক বৃদ্ধ। অসুস্থ এবং বৃদ্ধ এই মানুষটি ব্যাংকের ভুলে চাকরি হারিয়েছেন, আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। বর্তমানে তিনি দ্রুত মামলা প্রত্যাহার, অতিরিক্ত উত্তোলনকৃত অর্থ ফেরত এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি পুনরায় সচল করার দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালের জুলাই মাসে। আবু তাহের আল-আমীর ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোঃ আমিনুল হক তার নামে সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। গত ৬ জুলাই ২০২২ তারিখে এই অ্যাকাউন্টে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখা থেকে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা জমা হয়। এই ব্যাপারে আমিনুল হক অবগত হন এবং আবু তাহেরকে বলেন, টাকাগুলো তার এক বন্ধু পাঠিয়েছেন এবং তাকে জমাকৃত টাকাগুলো ফেরত দিতে হবে। ১৯ দিন অপেক্ষা করার পর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত টাকার ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ না করায় আমিনুল হকের নির্দেশে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ৪টি চেকের মাধ্যমে ৩টি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে প্রদান করেন আবু তাহের। কিন্তু এরপরই ঘটে বিপত্তি। অবশিষ্ট ১ কোটি টাকা স্থানান্তরের জন্য আমিনুল হকের অতিরিক্ত চাপাচাপি ও বিভিন্ন কার্যক্রমে আবু তাহেরের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এজন্য জমাকৃত টাকার নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি ৮৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখেন এবং বাকি ১৫ লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা থাকে।
৯ আগস্ট, ২০২২ তারিখে আবু তাহের ব্যক্তিগত কাজে নোয়াখালী গেলে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তিনি জানতে পারেন, তার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকাগুলো সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখার। এর মধ্যেই তার মালিক আমিনুল হক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী আবু তাহের কারাগারে থাকাকালীন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় এবং আল আমির ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত অন্য স্টাফ মোঃ মাইনুদ্দিনের সহযোগিতায় নগদ ও চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রদানকৃত তথ্যে প্রকাশ পেয়েছে। সেই হিসেবে, ব্যাংকের চাহিদার চেয়ে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা অতিরিক্ত জমা পড়ে তার অ্যাকাউন্টে। ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আবু তাহের ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা দ্রুত সমাধানের ও মামলা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। অতিরিক্ত টাকা ফেরত এবং মামলা প্রত্যাহার নিয়ে তারা গড়িমসি শুরু করেছে। এই বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আবু তাহের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ব্যাংকের ভুলের কারণে আমি একজন অসুস্থ, বৃদ্ধ ও অসহায় গ্রাহক সাত মাস জেল খেটেছি, চাকরি হারিয়েছি, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। উপরন্তু সুদূর রাঙ্গামাটি থেকে গাইবান্ধায় আসা আমার জন্য আর্থিক ও শারীরিকভাবে অনেক কষ্টকর। এজন্য তিনি অবিলম্বে ব্যাংক কর্তৃক মামলা প্রত্যাহার, পাওনার অতিরিক্ত উত্তোলিত ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেরত এবং তার অ্যাকাউন্টটি পুনরায় সচল করে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।